বর্তমানে শেয়ারবাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। ঐতিহ্যগতভাবে ডিভিডেন্ড ঘোষণার এই গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমেও ধারাবাহিক দরপতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বাজারের এই টালমাটাল অবস্থার পেছনে একাধিক কারণ সক্রিয় রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে, নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কিছু নেতিবাচক সিদ্ধান্ত বাজারের স্বাভাবিক গতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। পাশাপাশি, একটি অসাধু চক্র কারসাজির মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য পরিকল্পিতভাবে বাজারকে টেনে নামাতে সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ধারাবাহিক পতনের কারণে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক এখন গত চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। এই পরিস্থিতি বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে আরও দুর্বল করে তুলছে। বাজার স্থিতিশীল করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এখন দিশেহারা। দীর্ঘদিনের বিনিয়োগ থেকে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা না পাওয়ায় তারা এখন লোকসান দিয়ে বাজার থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সম্মিলিত নেতিবাচক প্রভাবই সূচককে বিপজ্জনক অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে।
বিনিয়োগকারী ও বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাজারে সৃষ্ট এই আস্থাহীনতা শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়, বরং এটি বাজারের স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতাকেও নির্দেশ করে। দ্রুত এই পতন রোধ করা না গেলে, ছোট বিনিয়োগকারীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন এবং পুরো শেয়ারবাজারের ওপর এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই পরিস্থিতিতে কারসাজির সঙ্গে জড়িত চক্রটিকে চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং বিএসইসিকে আরও বিনিয়োগবান্ধব সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে বাজার সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবারের বাজার পর্যালোচনা
বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আজ (০৪ নভেম্বর) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪১.৯৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৯.০৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা গত চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে গত ৯ জুলাই, ২০২৫ তারিখে ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫ হাজার ৩৫.৪৬ পয়েন্ট। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর অন্য দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ১০.৯০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৫.৭১ পয়েন্টে। এছাড়া, ডিএসই-৩০ সূচক ১৪.৭৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৪৬.২৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
আজ ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে মাত্র ৫৬টির দর বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মোট অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৪ শতাংশ। বিপরীতে, ২৭৭টির দর কমেছে এবং ৬৩টির দর অপরিবর্তিত ছিল।
আজ ডিএসইতে মোট ৪৫৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিনের লেনদেনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার। অর্থাৎ, এক দিনের ব্যবধানে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে প্রায় ৬৫ কোটি ৫ লাখ টাকা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ মোট ১৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের ২৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকার লেনদেনের তুলনায় কম।
আজ সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৯১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৪টির শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে, ১২০টির কমেছে এবং ২৭টির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১১০.৮৮ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৩১৭.২৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের দিনের তুলনায় তীব্র পতন নির্দেশ করে।
























