ঢাকা   সোমবার ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২

মার্জিন ঋণ সমন্বয়ের খবরে আবারও অস্থির পুঁজিবাজার

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:১০, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১৯:২৯, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

সর্বশেষ

মার্জিন ঋণ সমন্বয়ের খবরে আবারও অস্থির পুঁজিবাজার

শেয়ারবাজারকে দীর্ঘদিন ধরে পঙ্গু করে রাখা ‘নেগেটিভ ইকুইটি’র জাল থেকে মুক্ত করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মার্জিন ঋণ নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে। তবে এই পরিবর্তনের খবরে বাজারে দেখা দিয়েছে তীব্র অস্থিরতা। বিনিয়োগকারীদের বড় একটি অংশ বলছেন, বাজারকে সুস্থ করার বদলে এই কঠোর নীতি উল্টো ভয় ধরিয়ে দিয়েছে, ফলে আতঙ্কে বিক্রির চাপ বেড়ে সূচক টানা পতনে রয়েছে।

বিএসইসি জানিয়েছে, সংশোধিত মার্জিন ঋণ বিধিমালা দ্রুতই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। কমিশনের দাবি, নতুন নিয়মে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগকারী— উভয়েরই সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। কিন্তু বাজারের বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। ৫ সেপ্টেম্বর ডিএসই প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ৪৪৭ পয়েন্টে, অথচ এক মাসেরও কম সময়ে তা নেমে এসেছে ৫ হাজারের নিচে। এই সময়ের মধ্যে সূচক কমেছে প্রায় ৩৬১ পয়েন্ট, আর বাজার মূলধন উবে গেছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা। বিশ্লেষকদের মতে, মার্জিন ঋণ নিয়ে অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধাক্কা দিয়েছে।


অন্যদিকে, বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো অভিযোগ তুলেছে, যাদের ওপর এই নিয়ম সরাসরি প্রভাব ফেলবে, তাদের কাউকেই নীতিমালা প্রণয়নের আলোচনায় রাখা হয়নি। একাধিক ব্রোকার জানান, বিএসইসি নীতিগতভাবে বাজারের স্থিতিশীলতা চায়, কিন্তু বাস্তবে এই হঠাৎ পরিবর্তনগুলো বাজারে আস্থার সংকট তৈরি করছে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, “বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা”র কথা বললেও বিএসইসি বাস্তবে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যা তাদের আরও দুর্বল অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে।

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, নতুন বিধিমালা স্বল্পমেয়াদে বাজারে চাপ আনলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি বাজারকে ‘ঝুঁকিমুক্ত ও টেকসই’ করে তুলবে। তাদের দাবি, নীতিমালাটি কার্যকর হলে ব্রোকারদের অতিরিক্ত ঋণনির্ভর ট্রেডিং বন্ধ হবে, বিনিয়োগকারীরা বাস্তব আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে বিনিয়োগে ফিরবেন এবং বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় বাজারের অংশীদারদের একটি বড় অংশ বলছে— এই সংস্কারের ইতিবাচক প্রভাব দেখা দেওয়ার আগেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সোমবারের বাজার পর্যালোচনা

আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪০.১২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৬.৮৫ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস (শরিয়াহ সূচক) ১১.০৬ পয়েন্ট কমে হয়েছে ১ হাজার ৭২.৬৯ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৭.৪৯ পয়েন্ট হারিয়ে নেমেছে ১ হাজার ৯৬৯.১৯ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৮১টির দাম বেড়েছে, ২৬০টির কমেছে, আর ৫৫টির দর অপরিবর্তিত ছিল।


সারা দিনে ৩৯৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়, যা আগের কার্যদিবসের ৪৬১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার তুলনায় প্রায় ৬৭ কোটি টাকার কম। অর্থাৎ একদিনে লেনদেন কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। সেখানে মোট ১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়, যা আগের দিনের ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার তুলনায় বেশি।

সিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয় ১৮৯টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৫৭টির দাম বেড়েছে, ১০৬টির কমেছে এবং ২৬টির কোনো পরিবর্তন হয়নি।

দিন শেষে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬৮.২৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৩৭০.৯৯ পয়েন্টে। আগের কার্যদিবসে এই সূচক কমেছিল ১৭.৩৫ পয়েন্ট।

 

সর্বশেষ