ঢাকা   সোমবার ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসের পরও থামছে না পাঁচ ব্যাংকের দরপতন

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:০০, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

সর্বশেষ

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসের পরও থামছে না পাঁচ ব্যাংকের দরপতন

ঋণ অনিয়মে জর্জরিত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পাঁচটি ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের শেয়ারদর গত এক মাস ধরে অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি শেয়ারবাজারের সংবেদনশীলতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে, বিশেষ করে যখন সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে একীভূত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডাররা আপাতত কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না— এমন সরকারি পরিকল্পনার পরও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিশ্চুপ রয়েছে।

শেয়ারের দামে ভয়াবহ অস্থিরতা

গত এক মাসের লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এই ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দামে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। ক্রমাগত দর পতনে শেয়ারগুলোর দর তলানিতে নেমেছিল। এরপর হঠাৎ করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র সাত থেকে আট কর্মদিবসে শেয়ারগুলোর দাম দ্বিগুণ হয়। তবে এই উল্লম্ফন স্থায়ী হয়নি; এরপর ফের দর পতন শুরু হয় এবং শেয়ারগুলো তাদের সর্বোচ্চ দর থেকে ২০ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত হারিয়েছে।

এক্সিম ব্যাংক

গত ২৪ সেপ্টেম্বর এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারদর ২ টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছিল। ৭ অক্টোবর এই শেয়ার প্রায় ৮৬ শতাংশ বেড়ে ৫ টাকা ২০ পয়সায় ওঠে, যদিও পরে ৪ টাকা ৭০ পয়সায় ক্লোজিং হয়। রোববার (২৬ অক্টোবর) এই শেয়ার আবার সাড়ে ৩৬ শতাংশ দর হারিয়ে ৩ টাকা ৪০ পয়সায় নামে।

বাকি চারটি ব্যাংকের শেয়ারেও একই চিত্র দেখা গেছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের শেয়ারদর সাত দিনে দ্বিগুণ হওয়ার পর ফের ৩৩ শতাংশ পতন হয়েছে। একইভাবে গ্লোবাল ইসলামীর দর ৮৫ শতাংশ বেড়েছিল, যা পরে ২১ শতাংশ হারিয়েছে; সোশ্যাল ইসলামীর দর ১০৭ শতাংশ বেড়েছিল, যা এখন ৫২ শতাংশ কমেছে; এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ারদর ৭১ শতাংশ বেড়েছিল, যা ফের ৩৮ শতাংশ হারিয়েছে।

আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের হতাশা

বিনিয়োগকারীরা চরম হতাশার মধ্যে রয়েছেন এবং তারা নিশ্চিত নন যে, ব্যাংকগুলো একীভূত হলে আদৌ কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন কিনা। শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল এবং ব্যাংক রেজোলিউশনের অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, তাতে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের কিছু পাওয়ার কথা ছিল না। এমনকি গত ৯ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে প্রস্তাব অনুমোদিত হয়, সেখানেও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল না।

তবে, গত ১৩ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা জানায়, একটি স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়াচ্ছে যে পাঁচ ব্যাংক একীভূত হলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মন্ত্রণালয় আশ্বাস দেয় যে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেনি এবং একীভূত করার প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জের দায়িত্বহীনতা নিয়ে প্রশ্ন

বাজার-সংশ্লিষ্টরা এবং বিশেষজ্ঞরা বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিএসইসি-এর সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী মনে করেন, ব্যাংকগুলো একীভূত হবে— কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকারের পক্ষ থেকে এমন পরিকল্পনা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তাদের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করার আদেশ দেওয়া উচিত ছিল। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আইনি ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জগুলোরও ছিল, কিন্তু কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, "যখনই সিদ্ধান্ত হয়েছিল ব্যাংকগুলো একীভূত হবে, তখনই এগুলোর লেনদেন স্থগিত করা উচিত ছিল। এ দায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং স্টক এক্সচেঞ্জ উভয় কর্তৃপক্ষের।"

তিনি আরও বলেন, যেখানে লিখিত পরিকল্পনা হলো লোকসানি ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের কিছুই দেওয়া হবে না, সেখানে আবার 'স্বার্থ দেখার কথা' বলায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। শেয়ারবাজার অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায়, দায়িত্বহীন মন্তব্য করা, কেবল আশ্বাস দেওয়া বা নির্লিপ্ত থাকা— কোনোটিরই সুযোগ নেই। এই পরিস্থিতির জন্য যারা দায়িত্বশীল, তাদের জবাবদিহি করতে হবে।


 

সর্বশেষ