ঢাকা   বুধবার ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২

 মিউচুয়াল ফান্ড কেলেঙ্কারি! ৯ প্রতিষ্ঠানের ৯ কোটি টাকার জরিমানা, আজীবন নিষিদ্ধ রিয়াজ ইসলাম ও শিবলী রুবাইয়াত

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ২২ অক্টোবর ২০২৫

 মিউচুয়াল ফান্ড কেলেঙ্কারি! ৯ প্রতিষ্ঠানের ৯ কোটি টাকার জরিমানা, আজীবন নিষিদ্ধ রিয়াজ ইসলাম ও শিবলী রুবাইয়াত

শেয়ারবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ লোপাট ও বিধিবহির্ভূত বিনিয়োগের চাঞ্চল্যকর অভিযোগে কঠোর শাস্তি দিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলামসহ ছয় পরিচালককে ১ কোটি টাকা করে মোট ৬ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি ফান্ড তদারকিতে ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে আরও তিন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাসহ মোট ৯ কোটি ২১ লাখ টাকা দণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত হিসেবে, গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার দায়ে বিএসইসি সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও রিয়াজ ইসলামকে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম থেকে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশনের ৯৭৮তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিএসইসির মুখপাত্র মো. আবুল কালাম।

বিএসইসির তদন্তে দেখা যায়, এলআর গ্লোবাল পরিচালিত ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ডের ২৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয় তালিকাচ্যুত ও নিষ্ক্রিয় কোম্পানি পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালার লিমিটেডে (বর্তমানে কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড)। 

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—প্রতি ১০ টাকার শেয়ার কেনা হয় ২৮৯ টাকা ৪৮ পয়সা দরে, অথচ কোম্পানিটি তখন বন্ধ, এনএভি ঋণাত্মক ২.৭৪ টাকা এবং ডিএসইর ওটিসি প্ল্যাটফর্মে দাম ছিল মাত্র ১৩.৬০ টাকা!

এই অস্বাভাবিক বিনিয়োগের মাধ্যমে ইউনিটহোল্ডারদের ক্ষতি হওয়ায় বিএসইসি ৩০ দিনের মধ্যে ৯০ কোটি টাকা সুদসহ ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে। তা না হলে রিয়াজ ইসলামকে অতিরিক্ত ৯৮ কোটি টাকা, পরিচালক জর্জ এম. স্টক থ্রি ও রেজাউর রহমান সোহাগকে ১ কোটি টাকা করে জরিমানা দিতে হবে।

বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশকে ছয় ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে অপসারণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

এছাড়া কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেডের তৎকালীন ছয় পরিচালককে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের কারণে ১ কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
ফান্ড তদারকিতে ব্যর্থতার জন্য বাংলাদেশ জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিজিআইসি)-কে ৩ কোটি টাকা, মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে রেজাউর রহমান সোহাগ**-কে ১০ লাখ টাকা এবং স্বার্থের সংঘাত তৈরির জন্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শরীফ আহসান-কে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

আরও চাঞ্চল্যকর অভিযোগে উঠে এসেছে—কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেডের ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় রিয়াজ ইসলাম ও এরশাদ হোসেনের যোগসাজশে মানি লন্ডারিং সংঘটিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান, যা তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে, কোয়েস্ট বিডিসির ২০২৩ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে গাফিলতির অভিযোগে শফিক বসাক অ্যান্ড কোম্পানি, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে (এফআরসি) পাঠানো হয়েছে।