ঢাকা   শনিবার ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২

৬ কোম্পানির শেয়ারে চমক জাগানো উত্থান

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

৬ কোম্পানির শেয়ারে চমক জাগানো উত্থান

দেশের শেয়ারবাজারে যখন সূচক টানা পতনের ধারা বজায় রেখেছে এবং বিনিয়োগকারীদের হতাশা বাড়ছে, ঠিক তখনই অবিশ্বাস্য উত্থান ঘটিয়েছে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার। মাত্র সাড়ে চার মাসের ব্যবধানে সাতটি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে শতভাগেরও বেশি। বাজারের সামগ্রিক মন্দাভাবের মধ্যেও এই উত্থান একদিকে আশার সঞ্চার করলেও, অন্যদিকে প্রশ্ন তুলেছে— এত অল্প সময়ে এত বেশি মূল্যবৃদ্ধি কতটা বাস্তবসম্মত?

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারমূল্য বেড়েছে ২৪৫.৬৪ শতাংশ, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৫৭.৯৮ শতাংশ, আইএসএন লিমিটেডের১২২.৯৩ শতাংশ, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ১২০ শতাংশ, ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেমসের ১১৮.৮১ শতাংশ এবং সাপোর্ট লিমিটেডের ১০০.৯০ শতাংশ। বাজারে সামগ্রিক পতন সত্ত্বেও এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর এমনভাবে বেড়েছে যে তা বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এসব কোম্পানির উত্থান প্রসঙ্গ বাজারে নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই উত্থান যতটা চমকপ্রদ, তার পেছনে ততটাই প্রশ্নবিদ্ধ ইঙ্গিত রয়েছে। তাদের মতে, এত অল্প সময়ে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম এক বা দেড়শ শতাংশের বেশি বাড়া স্বাভাবিক বাজার আচরণ নয়। সাধারণত এই ধরনের অস্বাভাবিক উত্থান গুজব, কারসাজি বা কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টির ফল হয়ে থাকে।

ডমিনেজ স্টিলের উদাহরণ টেনে তারা বলেন, কোম্পানিটির আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বর্তমানে ১৫০.৬৮ গুণে দাঁড়িয়েছে— যা স্বাভাবিক সীমার অনেক উপরে। কোম্পানিটির আয় অনিশ্চিত থাকা সত্ত্বেও শেয়ারের এমন উত্থান বাজারে কারসাজির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, দুর্বল মৌলিক ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও কোনো শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়লে তা বিনিয়োগকারীদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। স্বল্পমেয়াদি লাভের আশায় যারা এই ধরনের শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন, তারা যেকোনো সময় বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। ইতিহাস বলছে— কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানো শেয়ার শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা চরম ক্ষতির শিকার হন।

তাদের পরামর্শ, বিনিয়োগের আগে কোম্পানির মৌলিক ভিত্তি যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। কোনো শেয়ারে বিনিয়োগের আগে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন, আয়ের প্রবণতা, ব্যবসার পরিধি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং শেয়ারটির দামে উত্থান চিত্র ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা উচিত।স্টক ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এই ধরনের অস্বাভাবিক উত্থান বাজারের স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতার জন্য বড় হুমকি। তারা মনে করেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ডিএসইর উচিত এমন শেয়ারের ওপর নজরদারি বাড়ানো, কারসাজির ইঙ্গিত পাওয়া গেলে দ্রুত তদন্ত শুরু করা এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। তা না হলে বাজারে আস্থা ফেরানো কঠিন হবে।

বর্তমানে শেয়ারবাজারে যেখানে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারমূল্য কমছে, সেখানে মাত্র কয়েকটি দুর্বল মৌলিক কোম্পানির দামে এমন উত্থান বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করছে। বাজারে ন্যায্যতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কারসাজিমুক্ত পরিবেশ তৈরি করাই এখন সময়ের দাবি। সেজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং ব্যাবস্থা আরও জোরদার ও কার্যকরা করা জরুর।