
দেশের বন্ডবাজারকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে সরাসরি উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মান অনুসারে বন্ড ইস্যুর খরচ কমাতে হবে, যাতে এ খাত বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে গঠিত ‘বন্ড মার্কেট ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ক যৌথ কমিটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই গভর্নরের এই প্রস্তাব আসে। কমিটি গত সপ্তাহে তাদের প্রতিবেদনে বন্ডবাজারের উন্নয়নের পথে থাকা নানা বাধা চিহ্নিত করে এবং সেগুলোর সমাধানে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে।
বর্তমানে বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে নানা পর্যায়ে উচ্চ ব্যয় গুনতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইস্যু ম্যানেজাররা মোট তহবিলের ০.৫০ শতাংশ ফি নেন—যা বড় আকারের বন্ডে তুলনামূলকভাবে কম হলেও সামগ্রিকভাবে ব্যয়সাপেক্ষ। এছাড়া বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) বন্ড আবেদনের জন্য ১০ হাজার টাকা এবং ইস্যুর আকার অনুযায়ী ০.১০ শতাংশ সম্মতি ফি দিতে হয়। এর বাইরে ট্রাস্টি আবেদন ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি ও বার্ষিক ফি বাবদও উল্লেখযোগ্য খরচ যোগ হয়। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে এই অতিরিক্ত খরচগুলো হ্রাসের ওপর জোর দিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পাওয়া এবং সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদের হার বন্ডবাজার বিকাশের বড় অন্তরায়। এ বিষয়ে গভর্নর ইতিবাচক পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন।
যৌথ কমিটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হলো, বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ-ইক্যুইটি অনুপাত ৬০ শতাংশের বেশি, তাদের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য শেয়ারবাজারকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের বেশি ঋণ দিতে পারবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
ড. মনসুর এসব সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, বন্ড ইস্যুর খরচ ও সময় কমাতে বিএসইসি-কে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, একটি শক্তিশালী বন্ডবাজার তৈরি হলে তা শুধু দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের স্থায়ী উৎসই হবে না, বরং ব্যাংক ঋণের ওপর চাপও কমাবে। এতে সামগ্রিকভাবে দেশের আর্থিক খাত আরও সুসংহত হবে। বিএসইসি প্রতিনিধিদের মতে, এসব সমন্বিত উদ্যোগ দেশের পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নেবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নতুন গতি আনবে।