ঢাকা   বৃহস্পতিবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২

বাজারে বড় পতন, তবু উঁকি দিচ্ছে বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাজারে বড় পতন, তবু উঁকি দিচ্ছে বিনিয়োগের নতুন সম্ভাবনা

দেশের শেয়ারবাজারে গত কয়েক কর্মদিবস সূচক পতনের মধ্যেই লেনদেনের শক্তিশালী প্রবাহ বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন বার্তা দিচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সূচক ওঠানামা বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম হলেও ধারাবাহিক লেনদেন প্রমাণ করছে যে বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন না। বরং অনেকে এই পতনকে নতুন করে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করছেন।

সূচকের গতি: উত্থান থেকে পতন

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার (০৭ সেপ্টেম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছিল ২২ পয়েন্ট। এদিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪৪১ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা গত ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে সোমবার সূচক কমে যায় ৯ পয়েন্ট, মঙ্গলবার বড় ধাক্কায় পড়ে ৮৯ পয়েন্ট এবং আজ বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) আরও ৬৫ পয়েন্ট কমে যায়। ফলে টানা তিন দিনে সূচক কমেছে ১৭৩ পয়েন্ট।

লেনদেনের চিত্র: স্থিতিশীল প্রবাহ

সূচক কমলেও লেনদেনের ধারা উল্লেখযোগ্যভাবে অব্যাহত থেকেছে। রোববারের রেকর্ড লেনদেনের পর সোমবারও লেনদেন ছিল ১ হাজার ৪০০ কোটির বেশি। মঙ্গলবার প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি এবং বুধবারও তা ৯৫০ কোটির ঘরে অবস্থান করে। অর্থাৎ সূচক পতন সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের কার্যক্রম স্থির থেকেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সূচক পতন মানেই বাজার খারাপ নয়। বরং ধারাবাহিক লেনদেন বাজারে তারল্যের প্রমাণ। বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় থাকায় বাজারের মৌলিক শক্তি অটুট রয়েছে।

কেন লেনদেন বাড়ছে?

অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংকে সুদের হার কিছুটা বাড়লেও শেয়ারবাজারের তাৎক্ষণিক মুনাফার সম্ভাবনা অনেক বিনিয়োগকারীকে বাজারমুখী করছে। পাশাপাশি, মুনাফা প্রত্যাশী কয়েকটি সেক্টর এবং নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রতি আগ্রহ বাজারে তারল্য ধরে রেখেছে।

শেয়ার বিশ্লেষক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “সূচক ওঠানামা বাজারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু লেনদেনের পরিমাণ প্রমাণ করে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অটুট রয়েছে। সংশোধনের সময় অনেকে ভালো শেয়ার কেনার সুযোগ খোঁজেন। তাই এই ধরণের পতন আতঙ্কের নয়।”

বিনিয়োগের সম্ভাবনা

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, সূচকের পতনের মধ্যেই বিনিয়োগের সুযোগ লুকিয়ে থাকে। যারা টেকসই ও মৌলভিত্তিক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন, তাদের জন্য এই সময়টিই হতে পারে ভবিষ্যতে লাভবান হওয়ার সেরা সুযোগ।

বুধবারের বাজার পর্যালোচনা

আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৫.১০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৭৩.১৪ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ১৫.৭৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৮৮.২২ পয়েন্টে, আর ডিএসই-৩০ সূচক ২২.৯২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২৯.৯০ পয়েন্টে।

লেনদেনের হিসেবে দেখা যায়, আজ ডিএসইতে মোট ৯৪৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। যা আগের কর্মদিবসের (মঙ্গলবার) ১ হাজার ১৭৭ কোটি ২৬ লাখ টাকার তুলনায় ২২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা কম। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৩টির দর বেড়েছে, ৩১৩টির দর কমেছে এবং ৪১টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।


অন্যদিকে, অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচক নিম্নমুখী হয়েছে। তবে লেনদেনে টাকার অংকে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। আজ সিএসইতে মোট ২৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের ১৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেয়ে বেশি।

আজ সিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪২টির দর বেড়েছে, ১৮৩টির দর কমেছে এবং ২৫টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৫৫.৩২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৪১৫.২৫ পয়েন্টে। উল্লেখ্য, আগেরদিন সূচকটি বেড়েছিল ২১৪.১৩ পয়েন্ট।