
দীর্ঘ সময় ধরে চলা মন্দা কাটিয়ে অবশেষে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা আর অনিশ্চয়তা ছিল ব্যাপক, কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে। ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতিতে সূচক এবং লেনদেন উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বাজারে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। এই ইতিবাচক ধারার মধ্য দিয়ে আজ শেয়ারবাজার গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। এই পরিবর্তন শুধু সূচকের বৃদ্ধি নয়, বরং বিনিয়োগকারীদের হারানো আস্থা ফিরে আসারও ইঙ্গিত বহন করছে।
শেয়ারবাজারের এই ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করেছে। প্রথমত, দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তিগুলো ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে, যা বিভিন্ন কোম্পানির কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সরকারের পক্ষ থেকে নীতিগত সহায়তা, বিশেষ করে শেয়ারবাজারের জন্য নেওয়া বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে। এই পদক্ষেপগুলোর কারণে বাজারের স্বচ্ছতা বেড়েছে এবং বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হয়েছে।
এছাড়াও, বেশ কিছু কোম্পানির পক্ষ থেকে ভালো ডিভিডেন্ড ঘোষণার প্রত্যাশা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিনিয়োগকারীরা এমন শেয়ারের দিকে ঝুঁকছেন, যেখানে ভবিষ্যতে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও আগ্রহ বেড়েছে, যা লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে এবং বাজারকে আরও গতিশীল করতে সাহায্য করেছে। পাশাপাশি, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ছোট বিনিয়োগকারীরা এখন বাজারের প্রতি বেশ আকৃষ্ট হচ্ছেন, যা বাজারের গভীরতা বাড়াচ্ছে।
রোববারের বাজার পর্যালোচনাআজ ০৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ( ডিএসই ) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২১.৮৭ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬৩৬.১৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এই সূচক ছিল ৫ হাজার ৬৫৮.১১ পয়েন্ট। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ০.৬১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২২৯.৪৪ পয়েন্টে অবস্থান করলেও, ডিএসই-৩০ সূচক ৫.৩৪ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৮৮.১০ পয়েন্টে পৌঁছেছে।
এই ঊর্ধ্বগতির দিনে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মোট ৪০০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪৮টিরই দর বেড়েছে, যেখানে ১২৭টির দর কমেছে এবং ২৫টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
শেয়ারবাজারের এই ইতিবাচক ধারার সবচেয়ে বড় প্রমাণ লেনদেনের পরিমাণ। আজ ডিএসইতে মোট ১ হাজার ৪৪১ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ১০ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১০৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৩৩৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম এক্সচেঞ্জ (সিএসই)-এর অবস্থাও ছিল বেশ ইতিবাচক। সেখানেও সূচকের পাশাপাশি লেনদেন বেড়েছে। গতকাল সিএসইতে ১৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের ১২ কোটি ২৪ লাখ টাকা থেকে বেশি। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৫৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৩টির দর বেড়েছে, ৮৬টির কমেছে এবং ২৬টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২১.০৯ পয়েন্ট বেড়ে ১৫ হাজার ৭২৩.১৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, উভয় শেয়ারবাজারে সূচক এবং লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আশাবাদ তৈরি হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের শেয়ারবাজার দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।