
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ নিষ্পত্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কাস্টমার কমপ্লেইনস অ্যাড্রেস মডিউল (সিসিএএম) চলতি বছরের প্রথম সাড়ে সাত মাসে প্রায় ৪৩ শতাংশ অভিযোগের সমাধান করেছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও প্রতিকার নিশ্চিত করতে এই প্ল্যাটফর্ম ক্রমেই আস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে মোট ২২৭টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ৯৮টি নিষ্পত্তি হয়েছে, আর বাকি ১২৯টি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হওয়া সিসিএএম মূলত ক্যাশ ও স্টক ডিভিডেন্ড বকেয়া, বিক্রি হওয়া শেয়ারের অর্থ না পাওয়া কিংবা অননুমোদিত শেয়ার বিক্রির মতো নানা অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির পথ খুলে দেয়।
মাসভিত্তিক চিত্র
-
জানুয়ারি: সর্বোচ্চ ২৮টি অভিযোগ, সমাধান হয়েছে ২৩টি।
-
আগস্ট: ১১টি অভিযোগের মধ্যে সমাধান মাত্র ২টি।
-
শেষ সাড়ে তিন মাসে: মোট ১০৪টি অভিযোগ, সমাধান হয়েছে ৩২টি (প্রায় ৩১%)।
দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য
চালু হওয়ার পর থেকে প্ল্যাটফর্মটিতে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৯৯টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৯৩৬টির নিষ্পত্তি হয়েছে—হার দাঁড়িয়েছে ৯২.২ শতাংশ।
আগে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য সরাসরি বিএসইসি বা স্টক এক্সচেঞ্জে যেতে হতো, যেখানে সময় লাগত মাসের পর মাস, কখনো বছরও। বর্তমানে অনলাইনে অভিযোগ নিষ্পত্তি হচ্ছে গড়ে ৩৩.৭ দিনে। ফলে বিদেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরাও সহজেই অভিযোগ দায়ের করতে পারছেন।
স্বচ্ছতা ও আস্থা
বিএসইসি কর্মকর্তাদের মতে, সিসিএএমের স্বচ্ছ প্রক্রিয়াই বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়েছে। অভিযোগকারীরা অনলাইনে তাদের অভিযোগের অবস্থা রিয়েল টাইমে দেখতে পান, সমাধান হলে ই-মেইল নোটিফিকেশন পান। এমনকি কোনো অভিযোগ দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকলে প্ল্যাটফর্ম থেকেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়।
সমন্বিত ব্যবস্থা
অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিএসইসি ইতোমধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ, স্টকব্রোকার এবং সিডিবিএলসহ সব পক্ষকে সিসিএএম নেটওয়ার্কে যুক্ত করেছে। এক্সচেঞ্জগুলো তাদের ট্রেক হোল্ডারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সমাধান করে, আর সিডিবিএল ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্টদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ নিয়ে কাজ করে। নির্ধারিত সময়ে সমাধান না হলে বিষয়টি সরাসরি বিএসইসিতে পাঠানো হয়।
সিসিএএমের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা এখন শেয়ার লেনদেনের বিলম্ব, মার্জিন ঋণ, জোরপূর্বক শেয়ার বিক্রি কিংবা শেয়ার হস্তান্তরে ব্যর্থতার কারণে আর্থিক ক্ষতির অভিযোগও সহজে জানাতে পারছেন।
সব মিলিয়ে, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় সিসিএএম কেবল অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যম নয়, বরং বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।