
শেয়ারবাজারে মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত একটি ভিত্তিহীন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, যার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এই গুজবে বলা হচ্ছে, মার্জিন ঋণের নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং এখন ঋণের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
গত চার কর্মদিবস ধরে বাজারে যে দরপতন হচ্ছে, তার পেছনে এই গুজবকে একটি বড় কারণ হিসেবে দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে গত দুই দিনের বড় দরপতনের জন্য মার্জিন ঋণের এই মিথ্যা খবরকেই প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। তাদের মতে, বিনিয়োগকারীরা গুজবে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেছেন, যার ফলে বাজারে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
তবে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে জানা গেছে, মার্জিন ঋণ নিয়ে কোনো নতুন নীতিমালা জারি করা হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, এনএভিপিএসের সঙ্গে ঋণের হার সামঞ্জস্য করার মতো কোনো পরিস্থিতি বর্তমানে নেই এবং এই গুজব সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
মার্জিন ঋণ কী?
মার্জিন ঋণ হলো শেয়ারবাজারে শেয়ার কেনার জন্য বিনিয়োগকারীদের দেওয়া একটি বিশেষ ঋণ সুবিধা। মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারহাউজগুলো এই ঋণ দিয়ে থাকে। যদি কোনো কারণে বিনিয়োগকারীর শেয়ারের দাম কমে যায় এবং ঋণের অনুপাত নির্দিষ্ট সীমার নিচে চলে আসে, তখন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো মার্জিন কল পাঠিয়ে অতিরিক্ত টাকা জমা দেওয়ার অনুরোধ করে। যদি বিনিয়োগকারী এই অনুরোধে সাড়া না দেন, তবে ব্রোকারেজ বা মার্চেন্ট ব্যাংক তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারে, যা ফোর্সড সেল নামে পরিচিত।
সর্বশেষ প্রস্তাবনা
চলতি বছরের শুরুতে গঠিত শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স মার্জিন ঋণ নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো: যাদের বিনিয়োগ ১০ লাখ টাকার কম, তাদের মার্জিন ঋণ বন্ধ করা। এছাড়াও, যাদের নিয়মিত আয়ের উৎস নেই, যেমন অবসরপ্রাপ্ত, গৃহিণী ও শিক্ষার্থীরা, তাদের জন্য এই ঋণ সুবিধা সীমিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর কারণ হলো, বাজারের দরপতনের সময় এই শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের অতিরিক্ত টাকা জমা দেওয়ার ক্ষমতা কম থাকে, ফলে তাদের ফোর্সড সেলের শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এটিই মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে আসা সর্বশেষ প্রস্তাবনা।