
শেয়ারবাজারে নতুন গতি আনতে শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় কোম্পানির তালিকাভুক্তির দাবি জোরালো হলেও দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এখনো নিজের বাধ্যতামূলক স্ব-তালিকাভুক্তির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
২০১৩ সালে ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিম কার্যকর করে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা আলাদা করা হয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল বাজারে উন্নত নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। আইন অনুযায়ী, ডিএসইর ৪০ শতাংশ শেয়ার সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, ২৫ শতাংশ বিক্রি হয়েছে চীনা কৌশলগত অংশীদারদের কাছে, আর বাকি ৩৫ শতাংশ সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ইস্যু করার কথা—যার মাধ্যমে ডিএসই আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকাভুক্ত হবে।
তবে এক দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এই ৩৫ শতাংশ শেয়ার ইস্যু নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সম্প্রতি তালিকাভুক্তির জন্য প্রস্তাব জমা দিয়েছে, যা বর্তমানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনে শেয়ার বিক্রির নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকায় তালিকাভুক্তি সম্পূর্ণভাবে এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। ডিএসই শেয়ারহোল্ডার-পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন মনে করেন, আগের পর্ষদ ও বিশেষ করে স্বাধীন পরিচালকরা সক্রিয় হলে তালিকাভুক্তি অনেক আগেই সম্ভব হতো। তিনি অভিযোগ করেন, আগের কমিশনগুলো বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে নানা সিদ্ধান্ত নিলেও ডিএসইকে তালিকাভুক্ত করার কোনো নির্দেশ দেয়নি।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে বিএসইসি ডিএসইকে তালিকাভুক্তির পরিকল্পনা তৈরি করে ২০২২ সালের মধ্যে সম্পন্ন করতে বলেছিল। কিন্তু ডিএসই সূত্র বলছে, তারা স্ব-তালিকাভুক্তির জন্য কমিশনের কাছে নির্দেশনা চেয়েছিল, তবে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ মেলেনি।
বিএসইসি’র মুখপাত্র মো. আবুল কালাম মনে করছেন, এখনই ডিএসই তালিকাভুক্তির উপযুক্ত সময়। তাঁর মতে, শেয়ারবাজার ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এবং ডিএসই একটি স্বনামধন্য ও মৌলিকভাবে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় শেয়ার ভালো দামে বিক্রি হতে পারে।
তবে ডিএসই পরিচালক ইমন এই মতের বিরোধিতা করছেন। তিনি মনে করেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি তালিকাভুক্তির জন্য অনুকূল নয়। এক্সচেঞ্জের পরিচালন আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় শেয়ারহোল্ডাররা ভালো দামে শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন না বলে আশঙ্কা করছেন। বর্তমানে ডিএসই মূলত সুদের আয়ের ওপর নির্ভরশীল, এবং বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরার পরই তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে।