
বাংলাদেশের ব্যবসা খাতভিত্তিক ‘কেস স্টাডি’ নিয়ে মার্কেটিংয়ের একটি বই প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা স্প্রিঞ্জার নেচার। বইটি লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, নাসরিন আকতার ও আবুরেজা এম মুজারেবা। আজ সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ‘মার্কেটিং ইন আ ট্রানজিশন ইকোনমি: নিউ রিয়েলিটিস, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড প্রসপেক্টস’ শীর্ষক বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিল সিটি ব্যাংক পিএলসি ও সাজগোজ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ কেস স্টাডি নিয়ে এটিই প্রথম আন্তর্জাতিক মানের প্রকাশনা। এই বই বাংলাদেশের বিপণন খাতকে এগিয়ে নিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন তাঁরা। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, এই প্রকাশনা শুধু একটি গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক অর্জনই নয়, এটি তাঁদের (লেখকদের) অন্য সহকর্মীদের জন্যও একটি অনুপ্রেরণা। সীমিত সম্পদ ও প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁরা আন্তর্জাতিক মানের কাজ করতে পারছেন, সেটিই সক্ষমতার প্রমাণ।
অনুষ্ঠানে বইটি লেখার অভিজ্ঞতা জানান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ২০০৫ সালে শিক্ষকতা শুরু করার সময়ই তিনি বুঝেছিলেন যে দেশীয় কেস স্টাডি না থাকায় শিক্ষার্থীদের বিদেশি উদাহরণ দিয়েই শেখাতে হয়। তাই পিএইচডি শেষে দেশে ফিরে তাঁরা কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নেন সেই শূন্যতা পূরণ করার।
ইসমাইল হোসেন বলেন, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, প্রাইমারি ডেটার (প্রাথমিক তথ্যের) ভিত্তিতে কাজ করে, নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অবশেষে এই বই প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে। বইটি দেশের শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের পথপ্রদর্শক হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মাহমুদ ওসমান ইমাম, মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সিরাজুল হক, ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাভেদ আখতার, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক শামস রহমান এবং ইউসিবিডির (ইউনিভার্সাল কলেজ বাংলাদেশ) প্রেসিডেন্ট ও প্রভোস্ট অধ্যাপক হিউ গিল। অনুষ্ঠানে তাঁরা বইটি নিয়ে আলোচনা করেন।
ইউসিবিডির প্রেসিডেন্ট হিউ গিল বলেন, বাংলাদেশে এত দিন নিজেদের কোম্পানি নিয়ে কেস স্টাডির বড় ধরনের ঘাটতি ছিল। এই বই সেই শূন্যতা পূরণ করেছে। তিনি বলেন, এই বই শুধু একটি একাডেমিক প্রকাশনা নয়, এটি বাংলাদেশের গবেষণা সংস্কৃতির অগ্রগতিতে একটি মাইলফলক।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক শামস রহমান বলেন, এই বই বাংলাদেশের মার্কেটিং শিক্ষায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আন্তর্জাতিক থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, খাদ্য উপাদান থেকে বুটিক ব্যবসা—বইটির কেস স্টাডির পরিসর বেশ বিস্তৃত, যা বাংলাদেশের গবেষণা ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শূন্যতা পূরণ করবে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাভেদ আখতার বলেন, ‘২৮ বছর পর নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে এই বইয়ের প্রকাশ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে আমি সম্মানিত। বইটি আমাদের দেশের নিজস্ব ব্র্যান্ড ও মার্কেটিং অভিজ্ঞতার বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরেছে, যা শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, আমাদের মতো পেশাজীবীদেরও শেখার বড় উৎস।’ তিনি বলেন, এটি একদিকে বাস্তব ব্যবসায়িক সমস্যাগুলোর প্রতিফলন, অন্যদিকে একাডেমিক বিশ্লেষণের কাঠামো।
বইটিতে বাংলাদেশের দেশীয় ও বহুজাতিক ৩৯টি কোম্পানিকে ঘিরে বিশ্লেষণভিত্তিক কেস স্টাডি উপস্থাপন করা হয়েছে। কৌশলগত মার্কেটিং, ভোক্তা আচরণ, ডিজিটাল মার্কেটিং, ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপনা ও সাপ্লাই চেইন-বিষয়ক নানা চ্যালেঞ্জ ও সাফল্যের গল্প এতে স্থান পেয়েছে। বইটিতে প্রথম আলোর মার্কেটিং–সংক্রান্ত একটি কেস স্টাডিও স্থান পেয়েছে।
বইটি এখন বিশ্বখ্যাত বই বিপণন প্ল্যাটফর্মগুলোয় ও স্প্রিঞ্জার নেচারের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। শিগগিরই বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য একটি স্বল্পমূল্যের সংস্করণ প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান আয়োজকেরা।