বাংলাদেশ ব্যাংক সমস্যাগ্রস্ত ৯টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) অবসায়নের অনুমোদন দিয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট ও অব্যবস্থাপনায় ডুবে থাকা এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন লিকুইডেশন প্রক্রিয়ায় নেওয়া হবে।
অবসায়নের তালিকাভুক্ত ৯টি এনবিএফআই হলো—
১) পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস
২) ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস
৩) আভিভা ফাইন্যান্স
৪) এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট
৫) ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট
৬) বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)
৭) প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স
৮) জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি
৯) প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫–এর আওতায় এই অবসায়নের বিধান রয়েছে। তবে বড় সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ডের অনুমোদন প্রয়োজন ছিল। বোর্ডের অনুমোদনের পর এখন নির্ধারিত হবে কোন প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন আগে শুরু হবে এবং কোন প্রতিষ্ঠান প্রথমে ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রাথমিকভাবে উচ্চ খেলাপি ঋণ, আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থতা এবং মূলধন ঘাটতি—এই তিন সূচকের ভিত্তিতে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে অব্যবহারযোগ্য (Non-viable) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার প্রাথমিক ব্যয় হতে পারে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ ও লোকসানের পরিমাণ:
-
এফএএস ফাইন্যান্স: ৯৯.৯৩% খেলাপি, লোকসান ১,৭১৯ কোটি টাকা
-
ফারইস্ট ফাইন্যান্স: ৯৮% খেলাপি, লোকসান ১,০১৭ কোটি টাকা
-
বিআইএফসি: ৯৭.৩০% খেলাপি, লোকসান ১,৪৮০ কোটি টাকা
-
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং: ৯৬% খেলাপি, ৩,৯৭৫ কোটি টাকা খেলাপি, লোকসান ৪,২১৯ কোটি টাকা
-
পিপলস লিজিং: ৯৫% খেলাপি, লোকসান ৪,৬২৮ কোটি টাকা
-
আভিভা ফাইন্যান্স: ৮৩% খেলাপি, লোকসান ৩,৮০৩ কোটি টাকা
-
প্রিমিয়ার লিজিং: ৭৫% খেলাপি, লোকসান ৯৪১ কোটি টাকা
-
জিএসপি ফাইন্যান্স: ৫৯% খেলাপি, লোকসান ৩৩৯ কোটি টাকা
-
প্রাইম ফাইন্যান্স: ৭৮% খেলাপি, লোকসান ৩৫১ কোটি টাকা
বাংলাদেশে মোট ৩৫টি এনবিএফআই রয়েছে, যার মধ্যে ২০টি প্রতিষ্ঠানকে সমস্যাগ্রস্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুস্থ অবস্থায় থাকা ১৫টির খেলাপি ঋণ মাত্র ৭.৩১%, বার্ষিক মুনাফা ১,৪৬৫ কোটি টাকা, এবং মূলধন উদ্বৃত্ত ৬,১৮৯ কোটি টাকা।
এছাড়া, অবসায়ন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীরা চাকরিবিধি অনুযায়ী সব সুবিধা পাবেন। আইনি প্রক্রিয়ার আওতায়, লাইসেন্স বাতিল করা হবে এমন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যেগুলো আমানতকারীর স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রম চালায়, দায় পরিশোধে অপারগ, এবং মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ সমস্যাগ্রস্ত এনবিএফআই খাতকে পুনর্গঠন ও ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দিকে একটি বড় ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
























