
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকারের চেয়ে কোম্পানিগুলো বেশি ‘স্মার্ট’। স্মার্ট বলেই তারা এত অর্থ পাচার করতে পেরেছে। অর্থ পাচার করার জন্য কোম্পানিতে যে কত ধরনের তেলেসমাতি হয়, তা এখন টের পাচ্ছি।
আজ সোমবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা এ কথা বলেন। ইআরএফ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ‘করপোরেট খাতে আর্থিক স্বচ্ছতা’ শীর্ষক সেমিনারও অনুষ্ঠিত হয়।
অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সভাপতি এন কে এ মবিন, সাবেক বাণিজ্যসচিব শুভাশীষ বসু প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার। সঞ্চালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, তারা (অর্থ পাচারকারীরা) এ বিষয়ে বেশ পারদর্শী। অর্থ এমনি পাঠান না। পাচার করেন নানা স্তরের মাধ্যমে। প্রথমে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠান। সেখান থেকে পরে পাঠান আরেক জায়গায়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভালো-মন্দ মিলিয়ে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অত্যন্ত ভালো। গতকাল রোববার এক অনুষ্ঠানে একজন অন্তর্বর্তী সরকারকে অথর্ব-টথর্ব বলেছেন। এগুলো কিছু মানুষের এমন ধরনের বয়ান, যা ফ্যাসিস্টকে সহায়তা করছে। দেখছি যে বয়ানগুলোর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও দুর্বল করা হচ্ছে এবং ফ্যাসিস্টকে আরও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনি (ওই ব্যক্তি) অবশ্য এ–ও বলেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো টাকাপয়সা মারেনি, ব্যাংককে আরও স্থিতিশীল করেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়িয়েছে। তবে আমরা যে সব ভালো করছি, তা নয়। অনেক ধরনের উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে যখন কথা বলি, দেখি যে বাংলাদেশের ব্যাপারে তারা অনেক ইতিবাচক।’
নিরীক্ষকদের উদ্দেশে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নিরীক্ষা কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, বরং অর্থ কোথা থেকে এল এবং কীভাবে তৈরি হলো, তা–ও যাচাই করতে হবে। তিনি বলেন, কিছু গণমাধ্যম এমন সব খবর পরিবেশন করে, যা কখনো কখনো সরকারকে দুর্বল করে বা ফ্যাসিস্ট শক্তিকে প্রভাবিত করে।
সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল, গঠনমূলক ও তথ্যভিত্তিক রিপোর্টিংয়ে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যখন আমরা ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরি, তখন আস্থা তৈরি হয়, কিন্তু বেপরোয়া সংবাদ আস্থাহীনতা তৈরি করে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ সরকারি-বেসরকারি খাতে কাজ করা অনেক পেশাজীবীর দেশপ্রেম ও নিষ্ঠার প্রশংসা করেন এবং গণমাধ্যম ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শৃঙ্খলাপূর্ণ ও শক্তিশালী যাচাই ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আহ্বান জানান।
অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের পরামর্শ বাজেট প্রণয়নে সহায়ক হয়। গত বছর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চাপে সরকার যখন বাজেটের ধরন নিয়ে ভাবছিল, তখন বিশ্লেষকদের প্রস্তাব ছিল বাজেট সংকোচনমূলক করার জন্য। আমরা বড় বাজেট ভেবেছিলাম, কিন্তু আপনাদের পরামর্শে তুলনামূলক ছোট ও বাস্তবসম্মত বাজেট করেছি। এ কৃতিত্ব আপনাদেরই।’
এফআরসি চেয়ারম্যান মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, করপোরেট খাতে কীভাবে স্বচ্ছতা আনা যায়, সেই চেষ্টা চলছে। আর্থিক স্বচ্ছতা আনার প্রথম দলিল হচ্ছে নিরীক্ষা প্রতিবেদন। আর আর্থিক প্রতিবেদনে সম্পদের মূল্য যদি সঠিকভাবে থাকে এবং সে সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকঋণ দেওয়া হলে পরে ব্যাংক তা ফেরত পাবে।