
চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জুন-জুলাইয়েই শনাক্ত হয়েছে অর্ধশতাধিক রোগী। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা নিধনে করপোরেশন তিন থেকে পাঁচ মাসের একটি ‘ক্রাশ’ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে এই কর্মসূচি চলছে চট্টগ্রাম নগরে মশার প্রজননের ওপর পুরোনো জরিপ ধরে।
সারা বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকলেও জুন থেকে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে রোগী বেড়ে যায়। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন হয়। এবারও বর্ষার শুরু থেকে ডেঙ্গু রোগী ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। একই মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়াও হচ্ছে।
চলতি মাসের প্রথম পাঁচ দিনে মোট ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে ৫০ জন। জুনে ছিল ১৭৬ জন। এ বছর চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত মোট ৪৯৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই জুন থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে। চলতি বছর মারা গেছে দুজন। গত শনিবার মোট ৪৩ জন রোগী ভর্তি ছিল চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে। আর ১৪ জুন ভর্তি ছিল ২২ জন।
সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করেছে। নগর ও আশপাশের উপজেলাগুলোতেও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সামনের কয়েক মাস এই রোগ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতা তৈরিসহ নানা প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি।
পুরোনো জরিপে ওষুধ ছিটানো:
ডেঙ্গু মোকাবিলায় সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। ২৮ জুন থেকে শুরু হওয়া ক্রাশ কর্মসূচি অনুযায়ী করপোরেশন প্রতিদিন প্রজননপ্রবণ তিনটি স্থানে মশকনিধনে প্রায় ৭০ জন কর্মী সচেষ্ট রাখে। এ ছাড়া সাধারণভাবে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় সকালে লার্ভিসাইট ওষুধ ছিটাচ্ছে এবং বিকেলে ফগিং করা হয় বলে জানান সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম।
২০২৩-২৪ সালে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), সিটি করপোরেশন ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সমন্বয়ে একটি জরিপ কাজ চলে। এতে চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে পাঁচটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলো কোতোয়ালি, বাকলিয়া, বায়েজিদ, চকবাজার ও বন্দর এলাকা। ওই জরিপ ধরেই বর্তমানে মশকনিধন কার্যক্রম চলছে। নতুন কোনো গবেষণা এখন আর হয়নি।
মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম বলেন, সারা বছর স্প্রে ও ফগিং কার্যক্রম চলে। ক্রাশ কর্মসূচি হটস্পট ধরে করা হচ্ছে। আগের জরিপ অনুযায়ী এটা করা হচ্ছে। নতুন জরিপ কাজ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চলবে।
তবে গত ফেব্রুয়ারিতে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি দল জরিপ করে গেছে। সেই জরিপটির ফলাফল এখনো করপোরেশন হাতে পায়নি। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে জরিপকাজ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ফেব্রুয়ারি মাসে এডিস মশার বিস্তার ততটা থাকে না, যতটা বর্ষার এই সময়টাতে বিদ্যমান। ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামে মোট ডেঙ্গু রোগী ছিল ২৮ জন।