
দেশের শেয়ারবাজারে আজ সোমবার (০৭ জুলাই) দারুণ ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। দীর্ঘ ১১ মাস পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স-এ একটি উল্লেখযোগ্য উত্থান পরিলক্ষিত হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের নতুন করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে। আজ ডিএসইএক্স ৮২ পয়েন্টের বেশি বেড়ে লেনদেন হয়েছে। এই উত্থানকে বাজারসংশ্লিষ্টরা একটি বড় চমক হিসেবে দেখছেন।
২০২৪ সালে ৭ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ডিএসই সূচকে দুটি উল্লেখযোগ্য উত্থান দেখা গিয়েছিল। পরদিন ৮ আগস্ট ডিএসইএক্স সূচক ৩০৬ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হয়, যা ২০১৩ সালে সূচকটি চালু হওয়ার পর একক দিনে সর্বোচ্চ উত্থান। তিনদিন পর ১১ আগস্ট সূচক আরও ৯১ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। তারপর থেকে ডিএসই সূচকে এমন বড় অঙ্কের উত্থান আর দেখা যায়নি। দীর্ঘ ১১ মাস পর আজ আবার শেয়ারবাজারে এই ধরনের একটি বড় উত্থান দেখা গেল, যা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করছে।
সূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনের চিত্রেও আজ ইতিবাচকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিন ডিএসইতে ৫৭৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর আগে গত ৫ মে ডিএসইর লেনদেন ৫৮৪ কোটি ২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল। এটি বাজারের তারল্য বৃদ্ধির একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। এতে বোঝা যায়, বিনিয়োগকারীরা এখন সক্রিয়ভাবে বাজারে অংশ নিচ্ছেন এবং ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
আজকের এই বড় উত্থানের পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে ব্যাংক খাত। একসময় যে ব্যাংক খাতের শেয়ারে ক্রেতা সংকট ছিল, আজ সেখানে উল্টো চিত্র। অনেক ব্যাংকের শেয়ার বিক্রেতা সংকটে পড়ে 'হল্টেড' হয়ে গেছে, যার মধ্যে রূপালী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের মতো আলোচিত দুর্বল ব্যাংকগুলোও রয়েছে। এই বিক্রেতা সংকট নির্দেশ করে, বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক খাতের শেয়ার ধরে রাখতে আগ্রহী। কারণ তারা এই খাতের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী।
সামগ্রিকভাবে আজকের এই উত্থান বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের জন্য একটি অত্যন্ত ইতিবাচক বার্তা বহন করছে। দীর্ঘদিনের মন্দা কাটিয়ে বাজার যে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, এটি তারই একটি প্রমাণ। বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং ব্যাংক খাতের শক্তিশালী পারফরম্যান্স আগামী দিনে বাজারের জন্য আরও ভালো কিছু নিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বাজার পর্যালোচনা
আজ সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস সোমবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮২.০৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৭৬.১৬ পয়েন্টে, যা গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ২৭ এপ্রিলে ডিএসইর সূচক ছিল ৪ হাজার ৯৯৫.৪৬ পয়েন্ট। আজ অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস ১৫.৭৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮১.১৮ পয়েন্টে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ৩৬.৮৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৭৩ পয়েন্টে।
আজ ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৩৭৮টির দর বেড়েছে, ৭৩টির দর কমেছে এবং ৪৫টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
ডিএসইতে আজ মোট ৫৭৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫০৬ কোটি ১৬ লাখ টাকার। আগের দিনের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৬৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) আজ ৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগেরদিন সিএসইতে ২১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল।
আজ সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১৫৪টির, কমেছে ৪৭টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২৭টির।
এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮৪.১৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮১২.২০ পয়েন্টে। আগেরদিন সিএএসপিআই সূচক ৯৯.৬৫ পয়েন্ট বেড়েছিল।