
ফরিদপুরের নগরকান্দায় ছোট বোনকে উত্ত্যক্তের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়ে ফেরার পথে মারধরের শিকার হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী বৈশাখী ইসলাম। এ ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। ঘটে পুলিশের ওপর হামলা, আটক, এমনকি ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধের ঘটনাও।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার বিকেলে। বৈশাখী ইসলাম তাঁর দশম শ্রেণিপড়ুয়া ছোট বোনকে নিয়ে বাইরে গেলে স্থানীয় শরীফ শেখ, সাগর কাজী, ফয়সাল শেখ প্রমুখ উত্ত্যক্ত করে বলে অভিযোগ। প্রথমে স্থানীয় সালিসে বিচার চাইলেও শুক্রবার থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন বৈশাখী। এরপর পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে।
থানায় অভিযোগ দায়েরের কিছুক্ষণ পরই বৈশাখী ভবুকদিয়া এলাকায় ফিরলে তাকে মারধর করা হয় বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য সেকেন কাজী, তার ছেলে সাগর কাজীসহ কয়েকজন বৈশাখীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকাবাসী পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে র্যাব ও সেনাবাহিনী পর্যন্ত পাঠাতে হয়।
রাত ৯টার দিকে বৈশাখীর ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এক ঘণ্টা পর প্রশাসনের আশ্বাসে তারা অবরোধ তুলে নেয়।
পরে ভুক্তভোগী বৈশাখী দুটি ও পুলিশ একটি মামলা দায়ের করে। গ্রেপ্তার হন শরীফ শেখ, সাগর কাজীসহ ছয়জন। এ বিষয়ে বৈশাখীর অভিযোগ, হামলাকারীরা ‘সুযোগসন্ধানী সুবিধাবাদী’। তারা আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও এখন বিএনপি নেতাদের ছায়ায় রয়েছে।
তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনৈতিক নেতারা ঘটনাটিকে ‘অরাজনৈতিক পারিবারিক বিরোধ’ বলে উল্লেখ করেছেন। অভিযুক্ত শরীফের পরিবারের দাবি, ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
বৈশাখীর পরিবার অত্যন্ত গরিব। তাঁর মা ফাহিমা বেগম বলেন, “আমি রাজনীতি বুঝি না, আমি বিচার চাই।”
ঘটনার রাজনৈতিক রঙ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মতভেদ থাকলেও উত্ত্যক্ত, নারী নিগ্রহ ও হঠাৎ হামলার মতো ঘটনা যে কতটা ভয়ানক সামাজিক সংকেত, নগরকান্দার এই পরিপ্রেক্ষিত তা আবারও মনে করিয়ে দিল।