ঢাকা   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

কারসাজিতে শেয়ারদর বৃদ্ধি নিয়ে তদন্তে ডিএসই

শেয়ারবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

কারসাজিতে শেয়ারদর বৃদ্ধি নিয়ে তদন্তে ডিএসই

স্বল্প-মূলধনী, লোকসানি, উৎপাদন বন্ধ থাকা এবং নামমাত্র আয়ের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা পুঁজিবাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। এসব কোম্পানির মধ্যে যেসব কোম্পানির শেয়ারের মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ৪০-এর বেশি, সেগুলোতে কারসাজি হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে তদন্তে নেমেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

প্রতিষ্ঠানটিকে তদন্ত করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিএসই সেই নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্তে নেমেছে। অতিমূল্যায়িত কোম্পানিগুলোর অর্থাৎ ৪০ পিইর বেশি শেয়ারগুলো কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের মার্জিন ঋণসুবিধা দেওয়া হচ্ছে কি না তা ক্ষতিয়ে দেখছে ডিএসই।

এ বিষয়ে ডিএসইর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব কোম্পানির শেয়ারের পিই চল্লিশের বেশি সেই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কেন বেড়েছে তা জানতে কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। পুঁজিবাজারের ঝুঁকি কমাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।

উল্লেখ্য, বছরের পর বছর আর্থিক হিসাব দেয় না বা লোকসানি কোম্পানির কোনো পিই রেশিও হিসাব হয় না, এমন অর্ধশতাধিক কোম্পানির শেয়ারের দর বহুগুণ বেড়েছে। রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের মতো সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি লোকসানে থাকলেও এর শেয়ার কেনাবেচা হচ্ছে ১ হাজার ৩৯৫ টাকায়। মুন্নু অ্যাগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৪১৬ পিই রেশিওতে। অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোনালী আঁশ ৫৩২ পিই রেশিও, অ্যাম্বি ফার্মা ৫৯৬ পিই রেশিও, সোনালী পেপার ১৩৬ পিই রেশিও, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ১৪৪ পিই রেশিও, আরামিট ৯৪ পিই রেশিওতে লেনদেন হচ্ছে। এর বাইরে আরও বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে, যাদের শেয়ারদর আকাশচুম্বী কিন্তু লোকসানি হওয়ায় পিই রেশিও গণনা করা সম্ভব নয়।

সর্বশেষ প্রকাশিত ইপিএস অনুযায়ী, গত বুধবার দিন শেষে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৪৫ কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে ৭২টির পিই রেশিও ছিল ৪০ থেকে ৪৬৯২, যা মোট শেয়ারের প্রায় ২১ শতাংশ। পিই রেশিও ১০০-এর ওপরে রয়েছে ৩৩টি শেয়ারের। গত সোয়া এক বছরে এসব শেয়ারের বাজারদর দ্বিগুণ থেকে সাড়ে ১৮ গুণ হয়েছে। ৫০ থেকে ৯৩ শতাংশ বেড়েছে ১৯টির।

বিএসইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৫ মাসে পুঁজিবাজারের উত্থানে বহু শেয়ারের বাজার দর বেড়েছে। নানা পর্যায় থেকে অভিযোগ আসছে, অনেকগুলো শেয়ারের দরবৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ ছিল না। কেউ কেউ কারসাজির অভিযোগও করছেন। তাই যেসব শেয়ারের পিই ৪০-এর ওপরে, সেগুলোর দর বৃদ্ধির কারণ কী, তা বোঝার চেষ্টা চলছে।

অবশ্য কমিশন যে প্রতিবেদন চেয়েছে তাতে সংশ্লিষ্ট শেয়ারগুলোর দরবৃদ্ধির প্রকৃত তথ্য উঠে আসবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তাদের। তারা জানান, এখন বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজে বিপুলসংখ্যক অনুসারীদের যুক্ত করে কারসাজি চক্র শেয়ারদর বাড়ায়। তারা গ্রুপ হয়ে, ভাগ হয়ে প্রথমে একদল শেয়ার কেনে দর বৃদ্ধি করে, অন্য গ্রুপ কিনে নেয়। পরে দ্বিতীয় গ্রুপ শেয়ার কিনে আর আগের গ্রুপ শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা নেয়। নিবিড় সার্ভিল্যান্স বা গোয়েন্দা তথ্য ছাড়া এসব কারসাজি ধরা কঠিন। এভাবে কারসাজি ধরার কোনো ব্যবস্থা বর্তমান সার্ভিল্যান্স ব্যবস্থায় নেই।

শেয়ার বিজনেস24.কম