facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার, ২০২৪

marcelbd

ইবাদত করার অঙ্গীকার করেই মানুষ দুনিয়ায় এসেছে


০৪ আগস্ট ২০১৫ মঙ্গলবার, ০৫:০৫  পিএম


ইবাদত করার অঙ্গীকার করেই মানুষ দুনিয়ায় এসেছে
১৭২. স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরদের বের করেন এবং তাদের নিজেদের সম্পর্কে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন আর বলেন, `আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?` তারা বলল, `হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা অঙ্গীকার করলাম।` এটা এই জন্য যে তোমরা যেন কিয়ামতের দিন বলতে না পারো, `আমরা তো এ বিষয়ে গাফিল ছিলাম` (এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না) (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৭২)। তাফসির : আগের আয়াতে একটি বিশেষ অঙ্গীকার অর্থাৎ আল্লাহর সঙ্গে ইহুদিদের অঙ্গীকার বিষয়ে আলোচনা করার পর এ আয়াতে ব্যাপক অঙ্গীকার অর্থাৎ আল্লাহর সঙ্গে গোটা মানবজাতির অঙ্গীকার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এখানে সে মহাপ্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছে, যা স্রষ্টা ও সৃষ্টি এবং দাস ও মনিবের সঙ্গে সে সময় হয়েছিল, যখন দাঙ্গাবিক্ষুব্ধ, পাপ-পঙ্কিলতাপূর্ণ এ পৃথিবীতে কোনো সৃষ্টি আগমন করেনি। মানুষের আদি অঙ্গীকার : সৃষ্টিলগ্নে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কৃত মানুষের ইবাদতের অঙ্গীকারের স্বরূপ কী ছিল, এ বিষয়ে ইমাম মালেক, আবু দাউদ, তিরমিজি ও ইমাম আহমদ (রহ.) মুসলিম ইবনে ইয়াসারের বরাতে উদ্ধৃত করেছেন যে কিছু লোক হজরত উমর (রা.)-এর কাছে উল্লিখিত আয়াতের মর্ম জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এ আয়াতের মর্ম জিজ্ঞাস করা হয়েছিল। তাঁর কাছে যে উত্তর আমি শুনেছি, তা হলো এই- "আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। তারপর নিজের কুদরতের হাত যখন তাঁর পিঠে বুলিয়ে দিলেন, তখন তাঁর ঔরসে যত সৎ মানুষ জন্মানোর ছিল তারা সবাই বেরিয়ে গেল। তখন তিনি বললেন, `এদেরকে আমি জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং এরা জান্নাতেরই কাজ করবে।` পুনরায় দ্বিতীয়বার তাঁর পিঠে কুদরতের হাত বোলালেন। তখন যত পাপিতাপি মানুষ তাঁর ঔরসে জন্মানোর ছিল তাদেরকে বের করে আনলেন এবং বললেন, `এদেরকে আমি দোজখের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং এরা দোজখে যাওয়ার মতোই কাজ করবে।` সাহাবিদের মধ্যে একজন নিবেদন করল, `ইয়া রাসুলুল্লাহ, প্রথমেই যখন জান্নাতি ও দোজখি সাব্যস্ত করে দেওয়া হয়েছে, তখন আর আমল করানো হয় কি উদ্দেশে?` রাসুল (সা.) বললেন, `আল্লাহ যখন কাউকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন সে জান্নাত বাসের কাজই শুরু করে। এমনকি তার মৃত্যুও হয় এমন কাজের ভেতরে, যা জান্নাতবাসীদের কাজ, আর আল্লাহ তাআলা যখন কাউকে দোজখের জন্য তৈরি করেন, তখন সে দোজখের কাজই করতে আরম্ভ করে। এমনকি তার মৃত্যুও এমন কোনো কাজের মধ্যেই হয়, যা জাহান্নামের কাজ`।" আলোচনার সারমর্ম হলো, রুহজগতে আল্লাহ তাআলা হজরত আদম (আ.)-এর পিঠ থেকে কিয়ামত অবধি আগত তাঁর সব সন্তানকে বের করে তাদের বোধ ও বাকশক্তি দান করেছেন এবং তাদের কাছ থেকে আল্লাহ তাআলার প্রভু ও মাবুদ হওয়ার বিষয়ে অঙ্গীকার নিয়েছেন। গোটা মানবজাতি সেদিন সমস্বরে আল্লাহ তাআলাকে প্রভু হিসেবে মেনে নিয়েছিল এবং দুনিয়ায় এসে আল্লাহর ইবাদত করার অঙ্গীকার করেছিল। যদিও দুনিয়ায় এসে অধিকাংশ মানুষ সে অঙ্গীকারের কথা ভুলে গেছে; কিন্তু করুণাময় আল্লাহ বিস্মৃত মানুষকে সে অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। সে অঙ্গীকারের কথা এখানে আলোচনার উদ্দেশ্য হলো, মানুষকে এ কথা বোঝানো যে একত্ববাদের দীক্ষা, ধর্মপ্রবণতা মানুষের জন্মগত একটি বিষয়। মানুষের মধ্যে স্রষ্টার প্রতি আনুগত্যবোধ ও মানবজীবনের দায়িত্ববোধ জন্মগতভাবে সংস্থাপিত হয়েছে। মানুষের মনোজগৎ একান্ত আদিতে সত্য ও ন্যায়ের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত। (তাফসিরে মা`আরেফুল কোরআন ও ইবনে কাছির অবলম্বনে)

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: