দাম নির্ধারণ করে দিয়ে নয়, বরং অপারেটরগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে আনতে চায় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
সংস্থাটি বলছে, দাম কমেছে, ধাপে ধাপে দাম কমিয়ে আনা হবে। দাম কমানোর বিষয়ে অপারেটরদের জন্য কোন নির্দেশনা আসছে কিনা জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস বলেন, “আমরা চাই অপারেটররা প্রতিযোগিতায় থাকুক, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দাম কমে আসবে। “বর্তমানে প্রতিযোগিতার বাজারে মোবাইল অপারেটরগুলো যে মূল্যে ব্যান্ডউইডথ দিচ্ছে অনেক সময় তার চেয়ে বেশি কমিয়ে রাখে। এ বিষয়ে আমরা মূল্য নির্ধারণ করে দিতে চাই না।” ইন্টানেটের দাম মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে নিয়ে আসতে বৃহস্পতিবার টেলিযোগাযোগ খাতের সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস বলেন, মূল্য কমাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। দাম কমেছে, আরো যাতে কমে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি।” গ্রাহক পর্যায়ে দাম কমানোর জন্য গত এক বছরে মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মূল্য ৩০ শতাংশেরও বেশি কমানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। গত এক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের প্রতি জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ এর গড় মূল্য ৫০ শতাংশ এবং বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন তাদের ব্যান্ডউইডথ প্রতি জিবিপিএস মোবাইল ব্যান্ডউইডথ এর গড় মূল্য ৫৬ শতাংশের বেশি কমিয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ এর ওই বৈঠকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের দাম কমানোর পাশাপাশি সেবার মান নিশ্চিত করতেও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাগাদা দেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম নিয়ে গ্রাহকের পক্ষ থেকে সব সময়ই অভিযোগ শোনা যায়; দাম কমানোর দাবি উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও। বিটিআরসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর জুন মাস পর্যন্ত মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ৬৮ লাখ ৯৯ হাজার, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৩ কোটি ৬৪ লাখ ১২ হাজার। বাংলাদেশে এক বছরে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে এক কোটি ৪ লাখ ৮৭ হাজার। চলতি বছর জুন নাগাদ মোট ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৮৩ লাখ ৪৭ হাজারে। বিটিআরসির হিসাবে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমানে বাড়ছে এবং এই সংখ্যা যখন আরো বাড়বে তখন মূল্য আরো কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন সুনীল কান্তি বোস। অপারেটরা বিটিআরসির নির্দেশনায় তাদের ব্যান্ডউইডথ পরবর্তী মাসে ক্যারি ফরওয়ার্ড (আগের মাসের অব্যবহৃত ডাটা পরের মাসে একই প্যাকেজে যোগ হবে) করে থাকে, যা ৬ মাস পর্যন্ত বহাল থাকছে। ফিক্সড ব্রডব্যান্ড এর অতিরিক্ত দামের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সুনীল কান্তি বোস বলেন, গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিতে অনেকগুলো প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, এই ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন হলে এই সুবিধা সবার নাগালে আসবে এবং মূল্যও কমে যাবে। আইএসপিগুলো আগে যে দামে ব্রডব্যান্ড সরবরাহ করতো সে মূল্য অনেক কমে এসেছে এবং সেবার মান ও ইন্টারনেট স্পিডও নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান বিটিআরসি প্রধান। বিটিআরসি এর হিসাবে, গত এক বছরে ওয়াইম্যাক্স গ্রাহক সংখ্যা প্রায় এক লাখ কমে এক লাখ ৮০ হাজার এবং আইএসপি ও পিএসটিএন ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা ৩৮ হাজার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৬৪ হাজারে।
ক্রমিক
|
সাল
|
ব্যান্ডউইথ মূল্য
|
০১
|
জুলাই ২০০৮
|
২৭,০০০.০০
|
০২
|
জুলাই ২০০৯
|
১৮,০০০.০০
|
০৩
|
ফেব্রুয়ারি ২০১১
|
১২,০০০.০০
|
০৪
|
আগস্ট ২০১১
|
১০,০০০.০০
|
০৫
|
সেপ্টেম্বর ২০১২
|
৮,০০০.০০
|
০৬
|
এপ্রিল ২০১৩
|
৪,৮০০.০০
|
০৭
|
এপ্রিল ২০১৪
|
২৮০০.০০ (বর্তমান মূল্য)
|
গত সাত বছরে বিভিন্ন সময়ে ব্যান্ডউইডথ এর মূল্য প্রায় ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলেও জানায় তিনি। ইন্টারনেট সেবা সুলভ ও সাশ্রয়ী করতে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সাত দফায় প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ চার্জ কমানো হয়েছে জানিয়ে বিটিআরসি প্রধান বলেন, “২০০৮ সালের জুলাই মাসে প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথ মূল্য ছিল ২৭ হাজার টাকা, যা বর্তমানে দুই হাজার ৮০০ টাকা।”