ঢাকা   মঙ্গলবার ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২

আর ফিরছে না মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ড—নতুন যুগে শেয়ারবাজার

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৩৪, ১১ নভেম্বর ২০২৫

আর ফিরছে না মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ড—নতুন যুগে শেয়ারবাজার

শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ড বা ক্লোজড এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড পর্যায়ক্রমে বাতিল করার পদক্ষেপ নিয়েছে। সংস্থাটি এই ধরনের ফান্ডগুলোকে সেকেলে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য নমনীয়তার অভাবযুক্ত বলে আখ্যায়িত করেছে। এর পাশাপাশি এই ফান্ডগুলোর পরিচালনায় দীর্ঘদিনের অনিয়মের রেকর্ডও উল্লেখ করেছে বিএসইসি।

নতুন মিউচুয়াল ফান্ড প্রবিধানের এক খসড়ায় বিএসইসি প্রস্তাব করেছে যে, এই নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর আর কোনো মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ড অনুমোদন দেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে শুধুমাত্র বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড বা ওপেন এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড চালু করার অনুমতি দেওয়া হবে। কমিশন জনসাধারণের মতামত নেওয়ার জন্য অক্টোবরে এই খসড়া প্রকাশ করেছে এবং মতামত পাওয়ার পর এটি চূড়ান্ত করা হবে।


কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডগুলো প্রায়শই দুর্বল রিটার্ন সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের বছরের পর বছর ধরে আটকে রাখে। ওই কর্মকর্তা বলেন, "অনেক ক্ষেত্রেই মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডগুলো প্রায় এক দশক ধরে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আটকে রেখেছে এবং তাদের পারফরম্যান্সের ওপর দায়বদ্ধতাও নগণ্য।" তিনি আরও যোগ করেন যে, দেশের মিউচুয়াল ফান্ড তছরুপের বেশিরভাগ ঘটনাই এই মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে ঘটেছে।

শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত এই ধরনের ফান্ডগুলোতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের (সাধারণত ১০ বছর) জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ মূলধন সংগ্রহ করা হয়। মেয়াদপূর্তির আগে বিনিয়োগকারীরা ইউনিটগুলো রিডিম বা উত্তোলন করতে পারেন না, যা তারল্যকে সীমিত করে। এর বিপরীতে, বে-মেয়াদি ফান্ডে বিনিয়োগকারীরা যেকোনো সময় ফান্ডের নেট অ্যাসেট ভ্যালুর (এনএভি) ভিত্তিতে ফান্ড ম্যানেজারের কাছ থেকে ইউনিট ক্রয় বা বিক্রয় করতে পারেন।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বে-মেয়াদি আয়ের ফান্ডগুলো বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও সুবিধা দেয়, কারণ তারা যখন খুশি টাকা তুলে নিতে পারে। এটি ফান্ড ম্যানেজারদের জবাবদিহি নিশ্চিত করে। তাদের মতে, "মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডের ম্যানেজাররা জানেন, পারফরম্যান্স যেমনই হোক তারা ব্যবস্থাপনা ফি পাবেনই, যা এক ধরনের আত্মতুষ্টি তৈরি করতে পারে।" তারা উল্লেখ করেন, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯৯ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ডই হলো বে-মেয়াদি আয়ের ফান্ড। বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৭টি মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত আছে, যেগুলোর মেয়াদ ২০৩২ সালের মধ্যে শেষ হবে।

তবে কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশের মতো অনুন্নত শেয়ারবাজারে এখনও বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ পণ্যের প্রয়োজন রয়েছে এবং সঠিক তদারকি থাকলে মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডগুলোও কার্যকর রাখা যেতো বলে তারা মনে করেন।