পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) নতুন কেনা সমুদ্রপথে চলাচল করা দুটি জাহাজের একটি গত বৃহস্পতিবার বুঝে নিয়েছে সংস্থাটি। জাহাজটি বুঝে নেওয়ার চার দিনের মাথায় আজ সোমবার থেকে হংকংভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়েছে সংস্থাটি।
চুক্তি অনুযায়ী জাহাজটি ভাড়া দিয়ে ভাড়া বাবদ প্রতিদিন ২০ হাজার ডলার বা ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাবে বিএসসি। সংস্থাটি জানিয়েছে, নতুন এই জাহাজের নাম এমভি বাংলার প্রগতি। প্রায় ১৯৯ মিটার লম্বা জাহাজটি ৬৩ হাজার ৭৭৭ টন পণ্য পরিবহনের উপযোগী। জাহাজটি আজ সোমবার থেকে প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আজ সকালে চীনের জিংজিয়াং ইন্টারন্যাশনাল বাথ থেকে জাহাজটির ঝুশানে রওনা হওয়ার কথা। ঝুশান থেকে তেল নিয়ে পণ্য বোঝাইয়ের উদ্দেশে আরেকটি বন্দরে রওনা হবে জাহাজটি।
জানতে চাইলে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার চীনের ইয়ার্ড থেকে জাহাজটি বুঝে নিয়েছি আমরা। বুঝে নেওয়ার পরপরই নতুন এই জাহাজ বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ভাড়া বাবদ প্রতিদিন ২০ হাজার মার্কিন ডলার পাবে বিএসসি।’
প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে নিজস্ব টাকায় গত জুনে জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল বিএসসি। গত আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি নামক প্রতিষ্ঠান থেকে ৯৩৬ কোটি টাকায় দুটি জাহাজ কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিএসসির জাহাজ কেনার চুক্তি হয়।
নতুন দুই জাহাজের আরেকটি এমভি বাংলার নবযাত্রাও আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিএসসির বহরে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্মাণাধীন বা নির্মাণ শেষের পথে রয়েছে এমন জাহাজ কেনার দরপত্রের কারণে খুব দ্রুত কেনা জাহাজ সংগ্রহ করতে পেরেছে সংস্থাটি।
বিএসসির বহরে বর্তমানে পাঁচটি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি তেল পরিবহন করা ট্যাংকার এবং দুটি সাধারণ পণ্য পরিবহনের বাল্ক জাহাজ। নতুন দুটি জাহাজের একটি যুক্ত হওয়ায় এখন সংস্থাটির বহরে জাহাজের সংখ্যা বেড়ে ছয়টিতে উন্নীত হয়েছে।
১৯৭২ সালের জুনে ‘এমভি বাংলার দূত’ জাহাজ চালুর মাধ্যমে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ব্যবসা শুরু করে সরকারি সংস্থা বিএসসি। ১৯৮২ সালে সংস্থাটির বহরে থাকা জাহাজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭টিতে, যা পরে ৩৮টিতে উন্নীত হয়। এরপর থেকেই সংস্থাটির বহরে জাহাজের সংখ্যা কমতে থাকে। সর্বশেষ ২০১৮ ও ২০১৯ সালে চীন সরকারের অর্থায়নে ১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকায় ছয়টি জাহাজ সংগ্রহ করেছিল বিএসসি। এর মধ্যে একটি জাহাজ রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়। পরে ওই জাহাজের বিমা বাবদ বিএসসি বড় অঙ্কের অর্থ পেলেও তার বহরে থাকা জাহাজের সংখ্যা কমে পাঁচটিতে নেমে আসে। নতুন যুক্ত হওয়া জাহাজটি ছাড়া বিএসসির বহরে যে পাঁচটি জাহাজ রয়েছে, সেগুলো ২০১৮ ও ২০১৯ সালে কেনা। সংস্থাটির কাছে পুরোনো কোনো জাহাজ নেই।
এদিকে সরকারি সংস্থা বিএসসির চেয়ে বেসরকারি মালিকানায় জাহাজের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে বেসরকারি খাতে রয়েছে ৯৫টি জাহাজ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৮টি জাহাজের মালিক কেএসআরএম গ্রুপ। মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ২৫টি ও আকিজ শিপিংয়ের ১০টি জাহাজ আছে। সংখ্যায় বিএসসির অবস্থান ষষ্ঠ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বহরে কনটেইনার থেকে শুরু করে সাধারণ পণ্যবাহী ও তেল-গ্যাস পরিবহনকারী জাহাজও রয়েছে।
























