
শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি)-এর চেয়ারম্যান মামুন রশীদকে প্রতিষ্ঠানটির অবিক্রিত প্লেসমেন্ট শেয়ার কেনার অনুমতি দেয়নি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিনিয়োগকারী ও বাজার-সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমালোচনা তৈরি হওয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা মৌখিকভাবে এই নির্দেশনা দেয়। বিএসইসি’র মুখপাত্র মো. আবুল কালাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-তে প্রকাশিত এক নোটিসে এনটিসি জানায়, চেয়ারম্যান মামুন রশীদ অবিক্রিত অংশ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। গত বছর আগস্টে কমিশন পুনর্গঠনের পর তিনি এনটিসি’র স্বাধীন পরিচালক হিসেবে যোগ দেন এবং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান।
তবে বিএসইসি’র বক্তব্য অনুযায়ী, প্লেসমেন্ট শেয়ারের জন্য নির্ধারিত রেকর্ড ডেট (১৫ মে, ২০২৩) অনুযায়ী প্রকাশিত শেয়ারহোল্ডারদের তালিকায় মামুন রশীদের নাম ছিল না। বিএসইসি’র মুখপাত্র জানান, প্লেসমেন্ট শেয়ারের অফার ডকুমেন্টে যাদের নাম ছিল, কেবল তারাই শেয়ার কেনার যোগ্য। যেহেতু বর্তমান চেয়ারম্যান সেই সময় পরিচালক হিসেবেও ছিলেন না, তাই তাকে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে গণ্য করার কোনো সুযোগ নেই।
২০২২ সালের অক্টোবরে এক বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) এনটিসি সিদ্ধান্ত নেয়, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ, কার্যকরী মূলধনের জোগান এবং বাগান ও কারখানার উন্নয়নে ২ কোটি ৩৪ লাখ প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু করবে। এই শেয়ারের অফার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১১৯ টাকা ৫৩ পয়সা, যেখানে বর্তমানে ডিএসইতে প্রতিটি শেয়ারের বাজারদর ২০৮ টাকা ২০ পয়সা।
সরকার, আইসিবি, সাধারণ বিমা কর্পোরেশনসহ স্পন্সর ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এই শেয়ার বরাদ্দ থাকলেও চার দফা সময় বাড়ানোর পরও সাবস্ক্রিপশন সম্পূর্ণ হয়নি। এতে কয়েক লাখ শেয়ার অবিক্রিত থেকে যায়।
কোম্পানিটি বর্তমানে গুরুতর অর্থসংকটে ভুগছে। বিএসইসি’র নির্দেশনা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ন্যূনতম পেইড-আপ ক্যাপিটাল ৩০ কোটি টাকা থাকা আবশ্যক, কিন্তু এনটিসি’র মূলধন এখনো মাত্র ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
মূলধনের অভাবে একদিকে যেমন সময়মতো চা গাছ রোপণ সম্ভব হচ্ছে না, তেমনি পুরনো যন্ত্রপাতির কারণে চা পাতার মানও নষ্ট হচ্ছে। ফলে কোম্পানি নিলামে প্রতি কেজি চা ১৮০ টাকায় বিক্রি করলেও উৎপাদন ব্যয় পড়ছে প্রায় ২৫০ টাকা, যার ফলে প্রতিবছরই লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। উপরন্তু, বকেয়া মজুরির দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে।