
সাও পাওলোর মরুম্বি স্টেডিয়ামে তখন গা গরম করছিলেন সান্তোসের খেলোয়াড়েরা। মাঠে গোলপোস্টের পেছনে গ্যালারিতে ছিল নেইমারের পরিবারের একটি অংশ—তাঁর স্ত্রী ব্রুনা বিয়ানকার্দি, কন্যা মাভি, বিয়ানকার্দির বাবা এবং তাঁদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী। কন্যার টানে নেইমার ছুটে যান সেখানে। মাভির গালে চুমু খেয়ে ফিরে আসেন মাঠে। তারপরের ঘটনা এতক্ষণে সবার জানা। ব্রাজিলিয়ান সিরি আ-তে আজ জুভেন্তুদের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জিতেছে সান্তোস। নেইমার করেছেন জোড়া গোল।
প্রায় ৩৮ হাজার দর্শকের সামনে প্রথমার্ধে ৩৭ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে দুই গোল পায় সান্তোস। ৩৭ মিনিটে জুভেন্তুদের গোলকিপারের সেভ থেকে ফিরতি বল পেয়ে গোল করেন নেইমার। ৪০ মিনিটে গোল করেন সান্তোসের আর্জেন্টাইন উইঙ্গার আলভারো ব্যারেয়াল। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে একটি গোল পরিশোধ করে জুভেন্তুদে। বিরতির পর ৮০ মিনিটে সান্তোস ফরোয়ার্ড লুকা মেইরিলেস পেনাল্টি আদায় করেন জুভেন্তুদের বক্সে। পেনাল্টি থেকে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন নেইমার। এ জয়ে ১৭ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে সিরি আ পয়েন্ট তালিকায় ১৫তম স্থানে উঠে এল সান্তোস।
সান্তোসে ফেরার পর ম্যাচে এটাই প্রথম জোড়া গোল নেইমারের। জয়ের পর ব্রাজিল জাতীয় দলে ফেরা নিয়েও কথা বলেন ৩৩ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ড। আগামী সেপ্টেম্বরে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দুটি ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল। আগেই ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট পাওয়া ব্রাজিল সেপ্টেম্বরেই শেষবারের মতো বাছাইপর্বে মাঠে নামবে।
বাংলাদেশ সময় ৫ সেপ্টেম্বর রিও ডি জেনিরোয় ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ চিলি। ১০ সেপ্টেম্বর এল আলতোয় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের প্রতিপক্ষ বলিভিয়া। এ দুটি ম্যাচ সামনে রেখে ব্রাজিল দলে ফেরার আশায় নেইমার বলেন, ‘আমার স্টাইল সবাই জানে। আমাকে এখন পাওয়া যাবে। আমি একজন অ্যাথলেট। এখনো ভালো বোধ করছি। এখন সিদ্ধান্তটি তাদের।’
সান্তোসের এই ম্যাচ দেখতে ব্রাজিল জাতীয় দলের পক্ষ থেকে স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক রদ্রিগো কায়তানো এবং কোচিং স্টাফের সদস্য ক্রিস্টিয়ানো নুনেস। মাঠে নেইমারের পারফরম্যান্স দেখে তাঁদের সন্তুষ্টই হওয়ার কথা। জোড়া গোল করার পাশাপাশি বেশ কিছু সুযোগও তৈরি করেন নেইমার। ৫২ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখলেও পুরো সময়ই মাঠে ছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে সান্তোসে ফেরার পর ক্লাবটির হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৭ ম্যাচে ৬ গোল করলেন নেইমার।
ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা নেইমার তাঁর দেশের হয়ে সর্বশেষ মাঠে নেমেছিলেন ২০২৩ সালের অক্টোবরে এই বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচেই উরুগুয়ের বিপক্ষে। সে ম্যাচে হাঁটুতে চোট পাওয়ার পর দীর্ঘ ১২ মাস ছিলেন মাঠের বাইরে। চোট কাটিয়ে ক্লাব ফুটবলে মাঠে ফেরার পর আবারও চোটে পড়েন তিনি। গত জুনে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ সামনে রেখে নেইমারকে ছাড়াই ব্রাজিলের স্কোয়াড গড়েন কোচ কার্লো আনচেলত্তি। তখন নেইমারকে স্কোয়াডের বাইরে রাখার বিষয়ে আনচেলত্তি বলেছিলেন, ‘সবাই জানে নেইমার কতটা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। সে বিশ্বকাপে খেলার জন্য ব্রাজিলে ফিরেছে, প্রস্তুতিও নিচ্ছে। আমিও চাই, সে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত থাকুক। বিষয়টি খোলাখুলিভাবে জানাতে আজ (কাল) সকালেই আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি।’
এখন সব চোখ নেইমারের দিকে। সান্তোসে ফর্ম ফেরার পর কি আবারও ব্রাজিলের জার্সি গায়ে উঠবে তাঁর? উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।