
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ। নাজমুল হোসেন তখনই নাটকীয়ভাবে বললেন, ‘আমার একটা ঘোষণা আছে।’
সেই ঘোষণা কী, তা অনুমান করা যাচ্ছিল আগে থেকেই। নাজমুল শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর আর টেস্ট দলের নেতৃত্বে থাকতে না চান, সেটা শোনা যাচ্ছিল তাঁকে ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই। আজ কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে সেটিই আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেন নাজমুল হোসেন।
টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে নাজমুল বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। আমি টেস্ট সংস্করণে আর এই দায়িত্ব পালন করতে চাই না। আমি সবাইকে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এটা ব্যক্তিগত কোনো কিছু নয়। পুরোপুরি দলের ভালোর জন্য আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমি মনে করি, এটাতে দলের ভালো কিছুই হবে। এই ড্রেসিংরুমে কয়েক বছর ধরে, লম্বা সময় ধরে আমার থাকার সুযোগ হয়েছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত যে তিনজন অধিনায়ক দলের জন্য সমস্যা হতে পারে। দলের ভালোর জন্য এখান থেকে সরে আসছি। যদি ক্রিকেট বোর্ড মনে করে, তিনটা অধিনায়কই রাখবে, এটা তাদের সিদ্ধান্ত।’
সিদ্ধান্তটি যে ব্যক্তিগত আবেগ–অনুভূতি নিয়ে নয়, সেটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নাজমুল পরে আবার বলেছেন, ‘আমি আশা করব, কেউ যেন এ রকম না মনে করে যে আমি ব্যক্তিগত কোনো কারণে বা রাগ থেকে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। এটা আমি নিশ্চিত করলাম এটা দলের ভালোর জন্য, এখানে ব্যক্তিগত কিছু নেই।’
পরে এক প্রশ্নের জবাবে নাজমুল বলেছেন, বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগকে বেশ কয়েক দিন আগেই এই সিদ্ধান্তের কথা তিনি জানিয়েছেন।
যদিও আজ সকালে চতুর্থ দিনের খেলা শুরুর আগে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনাপ্রধান নাজমূল আবেদীনের কাছে নাজমুল হোসেনের টেস্ট নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিল। নাজমুল বিসিবিকে কিছু জানিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যম কে বলেন, ‘না, এ রকম কোনো কথা হয়নি।’ নাজমূল আবেদীন গতকাল সন্ধ্যায় কলম্বোয় এসেছেন।
নাজমুলকে তিন সংস্করণের অধিনায়ক করা হয়েছিল গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি। এরপর গত মে মাসে টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব দেওয়া হয় লিটন দাসকে, নাজমুল থেকে যান টেস্ট আর ওয়ানডের অধিনায়ক। সর্বশেষ ১২ জুন বিসিবি নাজমুলের পরিবর্তে মিরাজকে ওয়ানডের অধিনায়ক ঘোষণা করে সবাইকে চমকে দেয়, নাজমুল হয়ে যান শুধুই টেস্ট অধিনায়ক।
গত বছর তিন সংস্করণের নেতৃত্ব পাওয়ার আগে নাজমুল গণমাধ্যম কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, অধিনায়কত্ব দেওয়া হলে সেটি তিনি লম্বা সময়ের জন্যই চাইবেন। সঙ্গে তখনো জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ দলে তিন সংস্করণে তিন অধিনায়কের ধারণাকে তিনি সমর্থন করেন না। নাজমুলের মত ছিল, তিন সংস্করণে একজন অধিনায়ক রাখাই ভালো। যদিও ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হতে পরে টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব তিনি নিজেই ছেড়ে দেন।
নেতৃত্ব পাওয়ার পর লম্বা সময়ের পরিকল্পনা করেই এগোচ্ছিলেন নাজমুল। বিশেষ করে ২০২৭ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ওয়ানডের জন্য বিশেষ কিছু পরিকল্পনা ছিল তাঁর। গত দেড় বছরে ক্রিকেটারদের সঙ্গে সেভাবে বোঝাপড়া তৈরি করেছেন। প্রধান কোচসহ কোচিং স্টাফের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও জমিয়ে তুলেছিলেন মিথস্ক্রিয়া। মাঝে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে ভাটার টান গেলেও অধিনায়ক নাজমুলের নেতৃত্বগুণ আলাদাভাবেই চোখে পড়েছে সব সময়।
কিন্তু যখনই তাঁর দেড় বছরে প্রক্রিয়ার ফলাফল আসার সময় হলো, তখনই ওয়ানডের নেতৃত্ব থেকে নাজমুলকে সরিয়ে দেওয়া হলো। কেন, কী কারণে—সেসবেরও কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি বিসিবি।