ঢাকা   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোরবানি শুধু রক্ত নয়, তাকওয়ার সিঁড়ি—জেনে নিন এর ফজিলত ও তাৎপর্য

ধর্ম

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৫:২১, ৭ জুন ২০২৫

কোরবানি শুধু রক্ত নয়, তাকওয়ার সিঁড়ি—জেনে নিন এর ফজিলত ও তাৎপর্য

কোরবানির মূল শিক্ষাই হলো আল্লাহর প্রতি নিখাদ আনুগত্য ও তাকওয়া। মহান আল্লাহ কোরআনে স্পষ্টভাবে বলেন, ‘এর রক্ত কিংবা গোশত তাঁর কাছে পৌঁছে না, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)। কোরবানি শুধু পশু জবাই নয়, এটি এক আত্মিক ত্যাগ, যার মাধ্যমে একজন মুমিন নিজেকে আল্লাহর নৈকট্যে নিয়ে যান।

পবিত্র হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আদমসন্তান কোরবানির দিন রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় কোনো আমল করে না। এই রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে কবুল হয়।’ (তিরমিজি)। আরও উল্লেখ আছে, কিয়ামতের দিন কোরবানির পশু তার শিং, খুর ও পশমসহ হাজির হবে, এবং প্রতিটি পশমের বিনিময়েও থাকবে একটি করে নেকি। (ইবনে মাজাহ, আহমাদ)

ইসলাম পূর্ববর্তী জাহিলিয়া যুগে কোরবানি ছিল এক ভয়ংকর ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন রীতি। দেবতার উদ্দেশ্যে পশু বা কখনো নরবলিও দেওয়া হতো, যা ইসলামের আগমনে বিলুপ্ত হয়। ইসলাম কোরবানিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিবেদিত করেছে এবং মুসলমানদের শিক্ষা দিয়েছে—‘আল্লাহ মুমিনদের জান-মাল কিনে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১১১)

কোরবানির পেছনে রয়েছে দুই মহান নবী হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর গভীর আত্মিক বন্ধন। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ইব্রাহিমের অনুসারীরাই তাঁর প্রকৃত ঘনিষ্ঠ এবং এই নবী (মুহাম্মদ সা.) ও ইমানদাররাই তার উত্তরসূরি।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬৮)। তিনিই মুসলমানদের ‘মুসলিম’ নাম দিয়েছিলেন এবং তাঁর দোয়াতেই আগমন ঘটে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর (সুরা বাকারা, আয়াত: ১২৯)।

কোরবানি হলো সেই আত্মত্যাগের চেতনাকে স্মরণ করার সময়, যা হজরত ইব্রাহিম (আ.) দেখিয়েছিলেন পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহর আদেশে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়ে। মুসলমানদের জন্য এটি শুধুই গোশতের উৎস নয়—এটি এক আত্মশুদ্ধির উপায়, দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যম, এবং সবচেয়ে বড় কথা, আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নিজের জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করার প্রতিশ্রুতি।