ঢাকা   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

জুলাই সনদে গণ আকাঙ্ক্ষা ও সামাজিক চুক্তির প্রতিফলন থাকতে হবে : রিফাত হাসান

জাতীয়

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ২৯ জুন ২০২৫

আপডেট: ১২:২৩, ২৯ জুন ২০২৫

জুলাই সনদে গণ আকাঙ্ক্ষা ও সামাজিক চুক্তির প্রতিফলন থাকতে হবে : রিফাত হাসান

লেখক ও সমাজচিন্তক রিফাত হাসান

চট্টগ্রামে জুলাই সনদ ঘিরে প্রথমবারের মতো এক মঞ্চে বসেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, জাতীয় পুনর্গঠন ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক চুক্তির ভিত্তি রচনায় এই সনদ একটি ঐতিহাসিক দলিল হয়ে উঠতে পারে। বক্তারা সনদে সামাজিক চুক্তির প্রতিফলন, সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র নির্মাণের প্রস্তাব তুলে ধরেন।

গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের “জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হল”-এ অনুষ্ঠিত হল “জুলাইয়ের সামাজিক চুক্তি: জুলাই সনদের জরুরত” শীর্ষক একটি ঐতিহাসিক মতবিনিময় সভা। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সহযোগিতায় ওই মতবিনিময় সভাটি আয়োজন করে জুলাই নেটওয়ার্ক।

ওই মঞ্চে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো এক মঞ্চে প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীরা একত্রিত হয়ে আলোচনা করেছেন। এই অনুষ্ঠানে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ভিন্ন মত থাকা সত্ত্বেও সকলে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা ও দেশের পুনর্গঠন ও ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক চুক্তির প্রয়োজনীয়তায় সম্মত হন।

সভার মূল আলোচনায় লেখক ও সমাজচিন্তক রিফাত হাসান বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র কেন সরকারের দেওয়া টাইমলাইনের ভেতরে হল না, তার কৈফিয়ত পর্যন্ত দিতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা তাদেরকে অবিশ্বস্ত ও অনির্ভরযোগ্য করে তুলেছে, জনগনের কাছে। আমি মনে করি, এই অবিশ্বস্ততা তৈরী হলে, পুরো উপদেষ্টা পরিষদের পদত্যাগই করা উচিত। তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের চেয়েও দরকার বোঝাপড়া। ঐক্য প্রায় সম্ভব না ধরনের ইউটোপিয়া। রাজনৈতিক দলগুলো, এবং আমরা নাগরিকরা কোন কোন বিষযে একমত হতে পেরেছি, যে কারণে আমরা একটা রাষ্ট্র গঠনে একমত হতে পারলাম, কিন্তু এই সোশাল কন্ট্রাক্টটা ইতিহাসের কারণেই ভুলে যেতে বসেছি আমরা,  জুলাই সনদে তা আমাদের সেই ন্যাশনাল হোপ ও সামাজিক চুক্তির ইশারা থাকতে হবে, স্রেফ ঐক্যপ্রক্রিয়া নয়।

আলোচনায় তিনি জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রে কী কী থাকতে হবে, তার বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, এই সনদের মাধ্যমে আমাদেরকে  ফ্যাসিস্টের তৈরী ধর্মযুদ্ধ থেকে বেরোনোর ঘোষণা দিতে হবে। একাত্তর প্রশ্নে আমাদের একটা মুজিবের তৈরী করে দেওয়া ধর্মযুদ্ধ আছে। একাত্তরে বাংলাদেশের অভ্যুদ্যয়ের বিরোধিতা ও কোলাবরেশন ইস্যুতে জামাত ও অন্যান্য দলগুলোর বিরুদ্ধে স্টেপ নেওযার সুযোগ ছিল, যা এড়িয়েছেন মুজিব। বরং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি প্রশ্নে জামাত ও অন্য ইসলামী দলগুলো নিষিদ্ধ করেছিলেন তিনি, যেহেতু ধর্মরেই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি ও মোকাবেলার বিষয় হিশেবে নিযেছিলেন, কোলাবরেশন ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার চেয়ে। এই স্টেপের মাধ্যমে, একাত্তরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদ্যয়ের বিরোধিতা ও কোলাবরেশন ইস্যুর যে কোন রকমের বিচাররে ধর্মযুদ্ধে রূপান্তরিত করেছিলেন মুজিব। এই ধর্মযুদ্ধের সিলসিলা হিশেবেই, পরে, তেরর শাহবাগ যুদ্ধাপরাধ না, বাংলাদেশে ফেনোমেনন হিশেবে পলিটিকাল ইসলাম মোকাবেলার টুল হিশেবেই শুরু হইছিল, যার থেকে বেরুতে পারছি না আমরা। আমাদের এই মুজিবের ধর্মযুদ্ধ থেকে বেরুনো পদ্ধতি বাতলানো দরকার এই ঘোষণাপত্রে। তিনি একই সাথে, এই সনদে বাংলাদেশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠিগুলোর মধ্যে জাতি পরিচয়ের বৈষম্য বিলোপ আর সব ধরনের জাতিগত, সম্প্রদায়গত ও রাজনৈতিক ঘৃণা ও গনঘৃণা তৈরীর বিরুদ্ধে অবস্থান পরিস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তিনি একই সাথে এই সনদে অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি, নতুন সংবিধান এবং জুলাইয়ের সনদকে সাংবিধানে অন্তর্ভূক্তির জরুরতের কথা বলেন।

সভায় উপস্থিত অন্য আলোচকরা আরো বলেন, জুলাই সনদের চারটি মূল গন্তব্য হবে। এক. একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে ভূমিকা রাখা। রাজনৈতিক ঐক্যের ভিত্তি নির্মাণ। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হওয়া।  আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবস্থান গড়ে তোলা। জুলাই সনদে জুলাইয়ের শহীদদের স্বীকৃতি ও আহতদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তার কথা থাকা দরকার বলে মনে করেন তারা।

সভায় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক জোট, পেশাজীবী এবং সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন। বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আর রাজী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসরাফিল খসরু, সদস্য, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), আজিজুল হক ইসলামাবাদী যুগ্ম মহাসচিব, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, জাহিদুল করিম কচি, সদস্য সচিব, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, সালেহ নোমান, সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন, কলি কায়েস সংগঠক, এমপাওয়ারিং আওয়ার ফাইটারস, তৌহিদুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (স্যাড), মাইন উদ্দিন জাহেদ, কবি ও শিক্ষক, দেওয়ান মামুন, মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মূকাভিনেতা, মোহাম্মদ ইউসুফ, সাধারণ সম্পাদক, গণঅধিকার পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর, জাবেদ আহমেদ, সদস্য, জাতীয় সমন্বয় কমিটি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, প্রকৌশলী মোহাম্মদ লোকমান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক সম্পাদক, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), মুক্তিযোদ্ধা জবিউল হাসান সদস্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, জুবাইরুল হাসান আরিফ, সংগঠক, দক্ষিণাঞ্চল, জাতীয় নাগরিক পার্টি, হাসান মারুফ রুমি, সদস্য, রাজনৈতিক পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, এডভোকেট আমির আব্বাস, সদস্য সচিব, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, হুজ্জাতুল আবির, সংগঠক, চট্টগ্রাম অঞ্চল, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ, নুরুল আফসার মজুমদার, স্বপন জেলা সমন্বয়ক, নাগরিক ঐক্য।

সভা শেষে জুলাই নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই আলোচনার ভিত্তিতে একটি খসড়া “জুলাই সনদ বিষয়ক প্রস্তাবনা” তৈরি করে তা রাজনৈতিক দলসমূহের মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছানো হবে।