ঢাকা   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

এনবিআরের আন্দোলন প্রত্যাহার

অর্থ ও বাণিজ্য

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৫৯, ৩০ জুন ২০২৫

আপডেট: ০১:০১, ৩০ জুন ২০২৫

এনবিআরের আন্দোলন প্রত্যাহার

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলমান আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। এর ফলে কয়েক দিন ধরে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি আপাতত শেষ হলো।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এবং ব্যবসায়ী নেতারা গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা।

এতে বক্তব্য দেন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও ভ্যাট বিভাগের নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, দেশের শীর্ষস্থানীয় চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান, নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি মির্জা আশিক রানা, মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা প্রমুখ।

জানা গেছে, আন্দোলন প্রত্যাহারের বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা সমঝোতার উদ্যোগ নেন। দিনভর বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন তাঁরা। যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আগে ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করে। এরপর এনবিআরের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম পারভেজ বলেন, ‘আজ (রোববার) সারা দিন সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এনবিআরের আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবিগুলো আমরা বোঝার চেষ্টা করেছি। সেই অনুসারে আমরা পরবর্তীতে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করি। কিছু ভুল–বোঝাবুঝির জন্য হয়তো এ রকম একটা বিপর্যয় দেখতে হয়েছে। আন্দোলনকারী এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নীতি ও ব্যবস্থাপনা আলাদা করার বিষয়টি চান। সবার সঙ্গে আলোচনা করে এটা করা হবে, এমন আশ্বাস দিয়েছে সরকার। এটা আমরা এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আশ্বস্ত করেছি।’

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার বলেন, অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের আলোচনায় কিছু বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারে সরকার পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে, এই উদ্যোগকে ঐক্য পরিষদ স্বাগত জানায়। তিনি আরও বলেন, ‘দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এবং দেশের আমদানি–রপ্তানি ও সরবরাহব্যবস্থা সচল রাখা তথা অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে এবং জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে। তবে রাজস্বব্যবস্থা সংস্কারে আমাদের উদ্যোগ ও কার্যক্রম যথারীতি অব্যাহত থাকবে।’

গত শনিবার থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে পণ্য আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের সার্বিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা শুরু হয়। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকা এই কর্মসূচির কারণে ঢাকার এনবিআর ভবন থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দর, ঢাকা কাস্টমস হাউস, বেনাপোল, সোনামসজিদ, আখাউড়া, বুড়িমারীসহ দেশের সব স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনে শুল্ক-কর আদায় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। স্থবির হয়ে যায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।

এনবিআরে সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে গত ১২ মের পর থেকে আন্দোলন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে সরকারের হয়ে রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটিতে একধরনের অচলাবস্থা শুরু হয়। এতে সেবায় বিঘ্ন ঘটে।

এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। উদ্দেশ্য হলো করহার নির্ধারণের মতো নীতিগত কাজ এবং কর আদায়ের কাজ পৃথক রাখা। অর্থনীতিবিদ, গবেষক, ব্যবসায়ীরাও দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব খাত সংস্কারের কথা বলে আসছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের একটি শর্ত ছিল, রাজস্ব নীতি ও আদায়ের কাজে আলাদা সংস্থা করা।

এনবিআরের কর্মকর্তারা দুটি বিভাগ করা নিয়ে তেমন আপত্তি করছেন না। তবে তাঁরা মূলত ওই দুই বিভাগে পদায়নের ক্ষেত্রে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার চাইছেন। সরকার উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগের কথা বলছে, যার মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা যায়। আন্দোলনকারীরা এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের পদত্যাগও দাবি করেছিলেন। তাঁদের দাবি, বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যান রাজস্ব খাতের এ সংস্কারে তাঁদের (এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারী) উপেক্ষা করছেন। উল্টো আন্দোলনকারীদের দমন-পীড়ন করছেন।

শাটডাউনে অচল শুল্ক-কর কার্যক্রম

গত শনিবারের মতো গতকালও কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল সকাল থেকে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনের সামনের ফটকে অবস্থান নেন তাঁরা। দুপুর পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলে। এই সময় এনবিআরে সব ধরনের কাজ বন্ধ থাকে।

দুপুরের দিকে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সংকট নিরসনে বিকেল চারটায় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠক হবে। তিনটার দিকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে রওনা হয়। ওই সময় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, এনবিআরের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকটি হবে না।

এদিকে শাটডাউন কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম বন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম সকাল থেকে বন্ধ থাকে। এর ফলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে চার হাজার কনটেইনার আটকে আছে। ঢাকা কাস্টমস হাউসের কাজ বন্ধ ছিল। এ ছাড়া বেনাপোল, ভোমরা, বুড়িমারী, সোনামসজিদ, আখাউড়াসহ দেশের সব স্থলবন্দর ও শুল্কস্টেশনে আমদানি–রপ্তানিসংক্রান্ত কাজ বন্ধ ছিল। কোনো শুল্কায়ন কার্যক্রম হয়নি। শুল্ক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শাটডাউন কর্মসূচিতে অংশ নেন।