ঢাকা   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

শিশুদের থাইরয়েড ক্যানসারের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানুন

শিশুদের থাইরয়েড ক্যানসারের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানুন

শিশুদের হরমোনজনিত রোগের অন্যতম কারণ থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা। থাইরয়েড হরমোনের অভাব কিংবা আধিক্য দুটিই বহু সমস্যার সৃষ্টি করে শিশুর দেহে। এর পাশাপাশি দেহের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্যানসারের মতো থাইরয়েড ক্যানসারও হতে পারে। যদিও এর ব্যাপকতা তুলনামূলক হারে কম। গবেষণায় দেখা গেছে, বছরে প্রতি ১ লাখ শিশুর মধ্যে ১ জন থাইরয়েড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

প্রাদুর্ভাব

যেকোনো বয়সের শিশুর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে কিশোর-কিশোরীরা। ১৫-১৯ বছর বয়সীদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে থাইরয়েড ক্যানসারের অবস্থান দ্বিতীয়। মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হয়। শিশুদের সব ধরনের ক্যানসারের মধ্যে ১ থেকে ১ দশমিক ৫ শতাংশ থাইরয়েড ক্যানসার।

থাইরয়েড ক্যানসারের প্রকারভেদ

সাধারণত থাইরয়েডের ক্যানসার তিন ধরনের হতে পারে। সবচেয়ে বেশি হয় প্যাপিলারি থাইরয়েড ক্যানসার (৯০ শতাংশ)। এরপর রয়েছে ফলিকুলার থাইরয়েড ক্যানসার, যার হার কম হলেও প্যাপিলারি থাইরয়েড ক্যানসারের তুলনায় দ্রুত লসিকা গ্রন্থিসহ (লিম্প নোড) ফুসফুস ও অস্থিমজ্জার মতো দূরবর্তী অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ছাড়া হতে পারে মেডুলারি থাইরয়েড ক্যানসার, যা কিছুটা বিরল এবং জন্মগত রোগ যেমন, মাল্টিপল এন্ডোক্রাইন নিওপ্লাসিয়া টাইপ-২-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

উপসর্গ বা লক্ষণ

অনেক ক্ষেত্রে উপসর্গ থাকে না। দৈহিক বা অন্য কোনো কারণে ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় ধরা পড়তে পারে। উল্লেখযোগ্য উপসর্গের মধ্যে ঘাড়ে ব্যথাহীন গুটলি/পিন্ড (লাম্প), লসিকা গ্রন্থি (লিম্প নোড) ফুলে যাওয়া, গলার স্বর পাল্টে যাওয়া (হোর্সনেস), ঢোঁক গিলতে বা শ্বাস নিতে কষ্ট বোধ করা।

রোগনির্ণয়

রোগের কারণ নির্ণয় করতে জেনেটিক ও তেজস্ক্রিয়তার প্রতিক্রিয়ার ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ। সন্দেহজনক মনে হলে শারীরিক ও রক্তের পরীক্ষা (থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্রম, জেনেটিক টেস্ট ইত্যাদি) করে রোগ নির্ণয় করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এ ছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী ধাপে ধাপে আলটাসনোগ্রাম, থাইরয়েড স্ক্যান, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, এফএনএসি, বায়োপসি ইত্যাদি পরীক্ষা করে রোগের প্রকারভেদ, উৎপত্তি, বিস্তৃতি, চিকিৎসাপদ্ধতি ও ফলাফল-সম্পর্কিত ধারণা করা হয়।

কৈশোরে থাইরয়েড হরমোনের অভাব
চিকিৎসা

প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার প্রমাণিত হলে সার্জারি করে ক্যানসারে আক্রান্ত অংশ ফেলে দেওয়া হয়। দূরবর্তী স্থানে ছড়িয়ে পড়লে রেডিওঅ্যাকটিভ আয়োডিনের মাধ্যমে আক্রান্ত কোষ ধ্বংস করা হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি বিনষ্ট হলে সারা জীবন নিয়মিত বাইরে থেকে থাইরয়েড হরমোন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

আশার কথা হলো, সঠিক সময়ে ও যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশু পূর্ণ সুস্থতা ও স্বাভাবিক আয়ু নিয়ে বেঁচে থাকে। কারণ, থাইরয়েড ক্যানসার ধীরে ধীরে বাড়ে এবং পর্যাপ্ত রেডিওঅ্যাকটিভ আয়োডিন শোষণের ক্ষমতা রাখে।