
অনেকক্ষণ বসে ছিলেন, হুট করে দাঁড়াতেই মনে হলো পুরো পৃথিবীটা যেন ঘুরছে। নিজেকে সামাল দিয়ে বুঝতে পারলেন ভূমিকম্প নয়, রক্তচাপ নেমে যাওয়ার কারণে মাথা ঘুরছে। হঠাৎ করে বসা বা শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালে মাথা ঘোরা, ঝাপসা দেখা বা দুর্বল লাগার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে কারও কারও। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন’ বা ‘পোস্টুরাল হাইপোটেনশন’। এর প্রভাবে দেহের অবস্থানের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপও হঠাৎ করে কমে যায়।
কেন হয়
স্বাভাবিক অবস্থায়, আমরা যখন শুয়ে বা বসে থাকি, তখন অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে রক্ত কিছুটা পা ও পেটের দিকে জমা হয়। অনেকক্ষণ একইভাবে থাকার কারণে শরীর এই অবস্থার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেয়। এ অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ালে শরীর নিজের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া চালু রাখতে তৎক্ষণাৎ কিছু কাজ করে, যাতে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু হুট করে দাঁড়ালে রক্ত মাথা ও হৃৎপিণ্ড থেকে খানিকক্ষণের জন্য নিচের দিকে চলে আসে। ফলে মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ডে হুট করে রক্তের অভাব দেখা দেয়। আর হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের মতো জায়গায় যখন রক্ত চলাচলের অভাব দেখা দেয়, তখনই রক্তচাপ পড়ে গিয়ে মাথা ঘোরায়।
প্রতিরোধে কী করবেন
তবে রক্ত চলাচলে পরিবর্তন যে সব সময় হয়, তা কিন্তু নয়। হুট করে দু-একবার এমন হতে পারে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তা অবশ্য বাড়ে। বিশেষ করে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা বেশ স্বাভাবিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের জন্য ওষুধের প্রয়োজন হয় না। জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এবং ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করেই এই সমস্যা মোকাবিলা করা যায়।
ধীরে ধীরে উঠুন: শোয়া বা বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময় তাড়াহুড়া করবেন না। প্রথমে কিছুক্ষণ বিছানার পাশে বা চেয়ারে বসে থাকুন, তারপর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ান। এতে শরীর দুটি অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে।
পর্যাপ্ত পানি খান: সারা দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল খেয়ে শরীর সতেজ রাখুন। পর্যাপ্ত পানি রক্তনালিতে রক্তের সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ফলে রক্তচাপও কমে যাওয়ার আশঙ্কা কমে।
ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন: দৈনন্দিন প্রয়োজনে তিন বেলা ভারী খাবার খেতেই হয়। কিন্তু চেষ্টা করুন পেট ভরে না খেয়ে কিছুটা খালি রাখতে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হজমের জন্য অন্ত্রে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে শরীরের অন্যান্য অংশে রক্তপ্রবাহ কমে যায়, ফলে খাওয়ার পর উঠে দাঁড়ালেও মাথা ঘোরায়।
নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন নিয়ম করে যতটুকু সম্ভব ব্যায়াম করুন। এতে শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকবে, এমনকি এ ধরনের সমস্যাও কমে আসবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ
মাঝেমধ্যে রক্তচাপ কমে যাওয়া তেমন কোনো চিন্তার কারণ নয়। তবে এ ঘটনা যদি ঘন ঘন হয়, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ, নিয়মিত রক্তচাপ পড়ে যাওয়া হতে পারে বড় কোনো রোগের লক্ষণ। যে কারণে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
সূত্র: হার্ভার্ড হেলথ