চলতি বছরে চরম অস্থির শেয়ারবাজার, কমে যাওয়া ঋণচাহিদা এবং খেলাপি ঋণের উল্লম্ফন সত্ত্বেও দেশের ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক দেখিয়েছে ব্যতিক্রমী আর্থিক পারফরম্যান্স। ট্রেজারি বিল ও বন্ড থেকে আসা শক্তিশালী আয়ের ওপর ভর করে এই ব্যাংকগুলো ২০২৪ সালের পুরো বছরের মুনাফাকে এই বছরের প্রথম ৯ মাসেই (জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর) ছাড়িয়ে গেছে।
এই ছয়টি ব্যাংক হলো—ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এবং ঢাকা ব্যাংক। তাদের এই সাফল্য দেশের বৃহত্তম শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের দীর্ঘদিনের সর্বোচ্চ মুনাফার রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। চলতি সময়ে ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা গত বছরের একই সময়ের ১০৮ কোটি টাকা থেকে কমে ৯৯ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
ব্যাংকগুলোর এই মুনাফা মূলত ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের আয়ের কারণে এসেছে। সম্মিলিতভাবে এই ছয়টি ব্যাংক বিনিয়োগ থেকে ৭ হাজার ৪১১ কোটি টাকা আয় করেছে— যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। তবে ব্যাংকিং ব্যবসার মূল উৎস—ঋণ বিতরণ থেকে তাদের নিট সুদের আয় ৩৩ শতাংশ কমে ২ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবিব বলেন, “বাংলাদেশের ব্যাংকিং বাজার এখন খুবই অসম, ফলে মুনাফায় বিশাল তারতম্য দেখা যাচ্ছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের পর দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকে আমানত ভালো পারফর্ম করা ব্যাংকগুলোর দিকে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে ব্যবসার পরিবেশ এখনও অনিশ্চিত। উদ্যোক্তারা কারখানা বন্ধ করায় ঋণের সামগ্রিক চাহিদা কমেছে, ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে সতর্ক হয়ে ট্রেজারি বন্ডের দিকে ঝুঁকছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬.৩৫ শতাংশ, যা দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
অধ্যাপক হাবিব বলেন, “যদিও ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিনিয়োগ থেকে আয় করছে, আমরা আশা করি তারা জিডিপি বৃদ্ধিকে সহায়তা করতে ঋণ বিতরণ ও শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াবে।”
শীর্ষ পারফর্মার ব্যাংকগুলোর মুনাফা (জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর, ২০২৫)
• ব্র্যাক ব্যাংক: ১,৫৩৬ কোটি টাকা (২০২৪ সালে ১,৪৩২ কোটি টাকা)
• পূবালী ব্যাংক: ৯০০ কোটি টাকা (২০২৪ সালে ৭৬২ কোটি টাকা)
• যমুনা ব্যাংক: ৪১৬ কোটি টাকা (২০২৪ সালে ২৭৯ কোটি টাকা)
• ব্যাংক এশিয়া: ৩৫১ কোটি টাকা (২০২৪ সালে ২৭৭ কোটি টাকা)
• শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক: ৩৮৯ কোটি টাকা (২০২৪ সালে ১৬৯ কোটি টাকা)
• ঢাকা ব্যাংক: ১৪০ কোটি টাকা (২০২৪ সালে ১২৭ কোটি টাকা)
এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক টেকসই হিসেবে চিহ্নিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংক মুনাফা ২৯ শতাংশ বেড়ে ৫৮৪ কোটি টাকা এবং সিটি ব্যাংক মুনাফা করেছে ৭২২ কোটি টাকা। তবে এই দুটি ব্যাংক এখনো তাদের পুরো বছরের মুনাফাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি।
























