ঢাকা   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

শুল্ক আলোচনা: পণ্যের মেধাস্বত্বে গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

অর্থ ও বাণিজ্য

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:২৭, ২৬ জুলাই ২০২৫

শুল্ক আলোচনা: পণ্যের মেধাস্বত্বে গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে মার্কিন পণ্য নকল করা নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে পোশাক নকলকারী শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। এতে মার্কিন শ্রমিকসহ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে দাবি করা হয়েছে। তাই শুল্ক নিয়ে দরকষাকষিতে মেধাস্বত্ব অধিকারকে (আইপিআর) শক্তিশালী ও কার্যকর করার বিষয়ে জোর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

সম্প্রতি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই দেশের মধ‍্যে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাণিজ‍্যের গতি-প্রকৃতি কেমন হবে, সেসব বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। বেশ কিছু বিষয়ে দুই দেশ মোটামুটি একমত। তবে কিছু বিষয় এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। শুল্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যায‍্যতা প্রত‍্যাশা করে। দুই দেশ আগামী মঙ্গলবার আবার আলোচনায় বসছে। 

এই দরকষাকষিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মেধাস্বত্ব অধিকারকে শর্ত হিসেবে যোগ করা হয়েছে। ঢাকা ও ওয়াশিংটন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, বাংলাদেশে সহজে নকল পণ্য পাওয়া যায়। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো পোশাক, ভোগ্যপণ্য, চলচ্চিত্র, ওষুধ এবং সফটওয়্যারে মেধাস্বত্ব অধিকার লঙ্ঘনের কথা জানিয়েছে। সরকার মেধাস্বত্ব অধিকার সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না; এ কাজে পর্যাপ্ত বিনিয়োগও করছে না। তবে আইপিআর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের মতো সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টায় মেধাস্বত্ব অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা ধীরে ধীরে বাড়ছে।

মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের (ইউএসটিআর) ২০২৪ ও ২০২৫-এর বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী নকল পোশাক তৈরির শীর্ষ পাঁচটি উৎসের একটি বাংলাদেশ। এটিকে উদ্বেগের বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংশ্লিষ্টরা। ট্রেডমার্ক আবেদন প্রক্রিয়াকরণে বা মেধাস্বত্ব নিবন্ধন পেতে বাংলাদেশে বেশ সময় লাগে। এটি বাজারে মেধাস্বত্ব অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) নিয়ে বৈঠক হয়। এতে বাংলাদেশে উচ্চমাত্রার জালিয়াতি এবং মেধাস্বত্ব আইন হালনাগাদ করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জোর দেওয়া হয়।

বিশ্বব্যাপী নকল পণ্য প্রস্তুতকারক দেশ নিয়ে দুটি তালিকা করেছে ইউএসটিআর। একটি অগ্রাধিকার নজরদারির তালিকা, অন্যটি সাধারণ নজরদারির তালিকা। এই দুই তালিকার কোনোটিতে বাংলাদেশের নাম নেই। অগ্রাধিকার নজরদারির তালিকায় তৈরি পোশাক শিল্পে ভারত ও চীনের নাম রয়েছে। সাধারণ নজরদারির তালিকায় রয়েছে ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানের নাম।

বাংলাদেশ ধীরে ধীরে তার মেধাস্বত্ব আইনকে বাণিজ্য-সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব অধিকারের চুক্তি (ট্রিপস) অনুযায়ী তৈরি করছে। বাংলাদেশ বিশ্ব মেধাস্বত্ব অধিকার সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) সদস্য এবং মেধাস্বত্ব-সম্পর্কিত প্যারিস কনভেনশনে যোগ দিয়েছে। ২০২৩ সালে কপিরাইট আইন, ২০২৩ সালে শিল্প নকশা আইন, ২০২২ সালে পেটেন্ট আইন, ২০০৯ সালে ট্রেডমার্ক আইন এবং ২০১৩ সালে পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) আইন হালনাগাদ করেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে নকল পণ্য প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কাস্টমস, মোবাইল কোর্ট, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), পুলিশ এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। কিন্তু এসব সংস্থার আইপিআর অভিযোগে যথাযথ মনোযোগ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ এবং সম্পদের অভাব রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুলিশকে নকল পণ্য প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে তথ্য দিলে কখনও কখনও তদন্ত করে, তবে নিজ থেকে এ নিয়ে তদন্ত করার আগ্রহ কম।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যম কে  বলেন, বাংলাদেশে নকল পণ্য তৈরি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ পুরোনো। একাধিকবার আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বিষয়টি তুলে ধরেছে দেশটি। বাংলাদেশে নকল পণ্য তৈরির ফলে কীভাবে তাদের শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাও জানিয়েছে ওয়াশিংটন। বাংলাদেশে যত কম্পিউটার চলে, তাতে যে অপারেটিং সিস্টেম বা সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়, তার ৯৯ শতাংশ নকল। এ অপারেটিং সিস্টেম বা সফটওয়্যারগুলো যদি আসল ব্যবহার করতে হতো, তাহলে বাংলাদেশে কম্পিউটারের দাম অনেক বেশি পড়ত। আসল পণ্য হলে মার্কিন অর্থনীতিতে তা অবদান রাখত। 

তবে শুল্কের দরকষাকষিতে শর্ত নিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ১৩টি কনভেনশন ও চুক্তিতে বাংলাদেশকে সই করতে বলেছে। এর অনেকটাতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সদস্য। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই ১৩টি কনভেনশন ও চুক্তিতে সই করার পাশাপাশি এ-সংক্রান্ত আইন বাংলাদেশে প্রণয়ন করতে হবে। সেই সঙ্গে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতেও শর্ত জুড়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে মার্কিন পণ্যের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত এবং নকল পণ্য তৈরি রোধে আরও ১১টি শর্ত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।