ঢাকা   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

চামড়ার দেশে বিপরীত চিত্র: বছরে আমদানি ১,৫০০ কোটি টাকার চামড়া!

অর্থ ও বাণিজ্য

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৩২, ২১ জুন ২০২৫

চামড়ার দেশে বিপরীত চিত্র: বছরে আমদানি ১,৫০০ কোটি টাকার চামড়া!

চামড়া বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভাবনাময় খাত, যা দেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি পণ্য। কিন্তু সেই চামড়া শিল্পই এখন নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সনদ না পাওয়া এবং পরিবেশ-দূষণ সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছে এ খাত। এর মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়কর খবর হলো — প্রতি বছর প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকার চামড়া আমদানি করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে, যা নিজ দেশের বিপুল কাঁচা চামড়া থাকা সত্ত্বেও একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দেশীয় চামড়া আন্তর্জাতিক বাজারের মানদণ্ডে যথেষ্ট ভালো হলেও সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি)-এর অপ্রতুলতা এবং এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় অনেক জুতা ও ব্যাগ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানকে বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করতে হচ্ছে। বিশেষ করে চীন, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান থেকে বিপুল পরিমাণে চামড়া আসছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দেশে প্রায় ১,৪৯৬ কোটি টাকার চামড়া আমদানি হয়েছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এর মধ্যে আমদানি হয়েছে প্রায় ৯৭৬ কোটি টাকার। এর মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের চামড়া, ভ্রমণব্যাগ, পশুর নাড়িভুঁড়ি দিয়ে তৈরি পণ্য ইত্যাদি।

অন্যদিকে, আমাদের কাঁচা চামড়ার সম্ভাবনা থাকলেও আন্তর্জাতিক এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় ইউরোপ-আমেরিকায় তা রপ্তানি হচ্ছে না। ফলে চীনের মতো দেশের কাছে কম দামে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে, যা পরে তারা উন্নত দেশে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা করছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আবু ইউসুফ বলেন, “এলডব্লিউজি সনদ না পাওয়ার কারণে আমাদের চামড়া আন্তর্জাতিক বাজারে সঠিক দাম পাচ্ছে না এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করতে হচ্ছে।”

বাংলাদেশে বছরে প্রায় এক কোটি পশু কোরবানি হয়, যা চামড়া শিল্পে বিপুল সরবরাহ নিশ্চিত করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশ্বের বাজারে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। ভিয়েতনামের মতো দেশ যেখানে ২০ বিলিয়ন ডলারের চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করছে, বাংলাদেশ এখনো এক বিলিয়ন ডলারের আশপাশে আটকে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর তথ্য বলছে, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে চামড়া রপ্তানি হয়েছে ১৪ কোটি ২০ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের তুলনায় সামান্য বেশি। কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে, যদি আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা যায়।

এলডব্লিউজি সনদ পাওয়া প্রতিষ্ঠান মাত্র ৮টি বাংলাদেশে, যেখানে ভারতের ৩৩৭, চীনের ২৬৯, ভিয়েতনামের ২৭ এবং পাকিস্তানের ৬২টি প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই সনদ অর্জন করেছে। সনদ পাওয়ার জন্য সিইটিপি সংস্কার এবং নতুন ইটিপি অনুমোদন দেওয়ার কাজ চলছে, তবে তা যথেষ্ট নয়।

সবমিলিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে এবং স্থানীয়ভাবে এ খাতকে শক্তিশালী করতে জরুরি ভিত্তিতে বড় ধরনের সংস্কারের প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে বিগ পুশ এবং একটি চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করে খাতটির সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে।