
সবুজ পাহাড় আর নীল কাপ্তাই হ্রদকে সঙ্গী করে রাঙামাটি শহরের ফিসারী সংযোগ বাঁধের পাশে পর্যটন সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত খুলছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের (আরএইচডি) উদ্যোগে গড়ে তোলা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন বাগান ‘আরএইচডি লেক ভিউ গার্ডেন’। ইতোমধ্যে এর প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সৌন্দর্যের মুগ্ধতা ছড়িয়ে এই গার্ডেন প্রতিদিনই ভ্রমণপিপাসু মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কাপ্তাই হ্রদের পাড় ঘেঁষা এই সংযোগ বাঁধে একসময় তীব্র ভাঙনের কবল নেমে আসে। বাঁধ রক্ষার পাশাপাশি পর্যটনকে আরও সমৃদ্ধ করতে রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ ও সড়কপাশের সৌন্দর্যবর্ধনের পরিকল্পনা নেয় সড়ক বিভাগ। প্রায় ৬শ মিটার এলাকাজুড়ে মাটি ভরাট করে সৃজন করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ বাগান।
সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে পর্যটকদের জন্য ওয়াকওয়ে, পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং টুরিষ্ট পুলিশ বক্সেরও ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। বাগানের পাশে সড়কে দূর্ঘটনা এড়াতে স্থাপন করা হবে সেফটি সাইন সিগন্যাল।
নোয়াখালী থেকে রাঙামাটি বেড়াতে আসা পর্যটক তানভীর হোসেন বলেন, ‘লেকের ভিউ অসাধারণ। বিকেলে ঠান্ডা বাতাস আর সূর্যাস্তের দৃশ্য চোখে লেগে থাকবে। এমন একটা পর্যটন স্পট আরও আগে দরকার ছিল। পুরোপুরি চালু হলে অনেক সুন্দর হবে।’
শুধু ভিন জেলা নয়, স্থানীয় বাসিন্দারাও নতুন এই স্থাপনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্থানীয় যুবক সুমন চাকমা বলেন, ‘লেক ভিউ গার্ডেন আমাদের শহরের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। নতুন পর্যটকরা আসছেন।’
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘অনেক জায়গায় ঘুরেছি, কিন্তু লেক ভিউ গার্ডেন একদম নতুন ও সুন্দরভাবে সাজানো হচ্ছে। কাপ্তাই লেকের পাড়ে বসে চা খাওয়ার মজাই আলাদা।’
স্থানীয় বাসিন্দা রোজিনা আক্তার বলেন, ‘আগে এমন জায়গা ছিল না যেখানে পরিবার নিয়ে অবসর কাটানো যায়। এখন সাপ্তাহিক ছুটিতে বাচ্চাদের নিয়ে আসার চেষ্টা করি। সব বয়সী মানুষের জন্য ভবিষ্যতে এটি উপভোগ্য একটি স্থান হবে।’
সিএইচটি ট্যুরিজম অ্যান্ড কালচার রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ফিসারী বাঁধ সংযোগ সড়কটি রাঙামাটির অন্যতম দৃষ্টিনন্দন সড়ক। এটি সংরক্ষণ ও পর্যটনবান্ধব করার উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা পরিষদ উদ্যোগ নিলে রাঙামাটিতে আরো নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলতে পারে।
তিনি বলেন, পার্বত্য রাঙামাটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পর্যটকদের জন্যও আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, ‘এই লেক ভিউ গার্ডেনটি শুধু একটি সৌন্দর্য বর্ধনের প্রকল্প নয়, রাঙামাটিবাসী ও পর্যটকদের মানসিক প্রশান্তি ও বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হবে। এখানে প্রায় ১০০ প্রজাতির উদ্ভিদের সমারোহ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থী ও উদ্ভিদপ্রেমীদের কাছে এটি বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠবে। বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ থাকছে, কোনো টিকিট সিস্টেম চালু হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাগান, পার্কিং, ওয়াকওয়ে, সিসি ক্যামেরা, সেফটি সাইন সিগন্যাল ও আলোকসজ্জার কাজ চলমান। আগামী এক মাসের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে। ভবিষ্যতে সড়কের অপর পাশে আরও সৌন্দর্য বর্ধনের পরিকল্পনা রয়েছে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাঙামাটিতে প্রকৃতির সৌন্দর্য আন্তর্জাতিক মানের। কাপ্তাই হ্রদ, সবুজ পাহাড়, ঝর্ণা মিলিয়ে যে অনন্য সমাহার, এই লেক ভিউ গার্ডেন সেই সৌন্দর্যকে আরেক ধাপ সমৃদ্ধ করেছে। এটি হবে রাঙামাটির পর্যটন শিল্পের নতুন দ্বার। লেক ভিউ গার্ডেন পুরোপুরি চালু হলে রাঙামাটির পর্যটন সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই।