ঢাকা   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

মাকে বাঁচাতে গিয়ে ছেলেও প্রাণ হারালেন

মাকে বাঁচাতে গিয়ে ছেলেও প্রাণ হারালেন

মা ফাতেমাতুজ জোহরাকে (৬২) চিকিৎসক দেখিয়ে ফিরছিলেন একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হাফেজুল ইসলাম (৪২)। পথে রেলক্রসিংয়ে রেলগেট পড়লে অটোরিকশার চালক সংকেত অমান্য করে পাশের রাস্তা দিয়ে পার হয়ে যেতে চেয়েছিলেন। রেললাইনের ওপর অটোরিকশাটি আটকে যায়। অল্প দূরে ট্রেন দেখে অটোরিকশা থেকে নেমে পড়েছিলেন হাফেজুল। পেরিয়েও গিয়েছিলেন রেললাইন। কিন্তু মাকে বাঁচাতে ফিরে আসেন তিনি। আর এ সময় ট্রেনটি অটোরিকশাসহ তাঁদের দুজনকে ধাক্কা দেয়। মৃত্যু হয় মা, ছেলে দুজনেরই।

গতকাল শনিবার রাতে ফেনী শহরের রেলগেট গোডাউন কোয়ার্টার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই ছেলে হাফেজুলের মৃত্যু হয়। গুরতর আহত মা ফাতেমাতুজ জোহরাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে গতকাল রাত ১২টার দিকে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও রেলওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল রাত আটটার দিকে নোয়াখালী থেকে ফেনীর পাঠাননগর এলাকায় ফিরছিলেন মা-ছেলে। রেলগেট গোডাউন কোয়ার্টার এলাকায় তাঁদের বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি সিগন্যাল অমান্য করে দ্রুত পার হওয়ার জন্য রেললাইনে উঠে যায়। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে চলাচলকারী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেন অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়।

গোডাউন কোয়ার্টার রেলগেটের গেটম্যান মোহাম্মদ বাবু বলেন, ‘রেলস্টেশন থেকে নির্দেশনা পেয়ে চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেন গোডাউন কোয়ার্টার এলাকা অতিক্রম করার জন্য আমি গেট বন্ধ করি। নির্দেশনা অমান্য করে রং সাইড দিয়ে রেললাইন অতিক্রম করার চেষ্টা করলে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা রেললাইনের ওপর আটকে যায়। বারবার সরাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। একপর্যায়ে ট্রেনটিকে লাল সিগন্যাল দিয়ে থামাতে চাইলেও কম দূরত্বের কারণে থামানো সম্ভব হয়নি। অটোরিকশায় থাকা দুই যাত্রী নামার চেষ্টা করলেও মাকে বাঁচাতে গিয়ে ছেলে আহত হন। পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালককে ধরে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।’


ফেনী জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার রায়হান উদ্দিন বলেন, ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁদের একজন হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা যান। অপরজনের মাথা ও পায়ে মারাত্মক জখম ছিল। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

হাফেজুল ইসলামের ছোট ভাই রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে এসে মাকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে আইসিইউর ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না হওয়ায় মাকে নিয়ে চট্টগ্রামের পার্ক ভিউ হাসপাতালে যাই। হাসপাতালে ঢোকার কিছুক্ষণ পরই রাত ১২টার দিকে মাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে রাত দুইটার দিকে মরদেহ নিয়ে ফেনীতে আসি। সেখানে ভাইয়ের মরদেহ রাখা ছিল মর্গে।’

ভাই ও মাকে হারিয়ে মেয়ে জাহানারা আফরোজ ভেঙে পড়েছেন। তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। ২০০৮ সালে কুয়েতপ্রবাসী বাবা মারা যাওয়ার পর মা-ই ছিলের তাঁদের একমাত্র সম্বল। বেশির ভাগ সময় যুক্তরাজ্যে বড় মেয়ের বাড়িতে থাকতেন তিনি। চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি লন্ডন থেকে বাড়িতে এসেছিলেন। হঠাৎ কিছুটা অসুস্থ হওয়ায় শনিবার ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসক দেখাতে তিনি নোয়াখালী গিয়েছিলেন।

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুজ্জামান ও রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) উপপরিদর্শক ইকবাল হোসেন বলেন, নিহত দুজনের মরদেহ স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় লাকসাম জিআরপি থানায় অপমৃত্যু মামলা করার কার্যক্রম চলমান। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা চলমান।