ঢাকা   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

খেলা শেষে মাকে কী বললেন ঋতুপর্ণা?

খেলার জগৎ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৮:০৫, ৩ জুলাই ২০২৫

খেলা শেষে মাকে কী বললেন ঋতুপর্ণা?

মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের থুউন্না স্টেডিয়ামের হাজার হাজার দর্শককে স্তব্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশ যখন জয়ের উৎসবে মেতে ওঠে, তখন জয়ের নায়িকা ঋতুপর্ণা চাকমা ফোন করেছিলেন তাঁর মাকে। রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মঘাছড়ি গ্রামে মা বাসুবতি চাকমাও ছিলেন সেই মুহূর্তের অপেক্ষায়। টেলিভিশনের সূত্রে জয়ের খবর ততক্ষণে সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। চলছে উল্লাস, চিৎকার। আর এর মধ্যে মেয়ে ঋতুপর্ণার ভিডিও কল, আবেগে থরো থরো হয়ে বলেছিলেন, ‘মা আমরা জিতে গেছি।’

গতকাল বুধবার রাতে ঋতুপর্ণার জোড়া গোলেই ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। ২-১ গোলে মিয়ানমারকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান ফুটবল কাপে জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। ঋতুপর্ণার দুটি গোলই ছিল দেখার মতো। বিশেষ করে খেলার ৭১ মিনিটে করা দ্বিতীয় গোলটির ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রশংসায় ভাসছেন রাঙামাটির কন্যা ঋতুপর্ণা। আর আনন্দে ভাসছে তাঁর মঘাছড়ি গ্রামও। গতকাল রাত থেকেই উৎসব চলছে সেখানে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় মঘাছড়ি গ্রামে কথা হয় বসুবতি চাকমার সঙ্গে। দেখা হতেই হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন। গণমাধ্যম কে  তিনি বলেন, ‘বুধবার খেলা শেষ হওয়ার পরই ঋতু আমাকে ভিডিও কল দিয়েছে। তাঁর খেলা ভালো হয়েছে , মিয়ানমারের সঙ্গে জয়ী হয়েছে সেই খবর জানিয়েছে।’

উচ্ছ্বাস বসুবতি বলেন, সন্তানের ভালো খবর পেলে মায়ের কেমন লাগে বলে বোঝানো যাবে না। তিনি দেশবাসীর দোয়া চাইলেন ঋতুপর্ণার জন্য।

ঋতুপর্ণার বড় বোন পুতুলি চাকমা ও তাঁর ১৮ মাসের শিশুও তখন মায়ের সঙ্গে ছিলেন। বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখা যায় বসার ঘরে টানিয়ে রাখা হয়েছে ঋতুপর্ণার বিভিন্ন অর্জনের সনদ ও ছবি। এক পাশে কাঠের শোকেসে রাখা সারি সারি ক্রেস্ট ও পদক।

ঋতুপর্ণার জয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ পুরো মঘাছড়ি গ্রামে। গ্রামের গাছতলা, চায়ের দোকান—সবখানেই এখন ঋতুপর্ণা চাকমার জোড়া গোলের গল্প। গতকাল রাত থেকেই গ্রামের স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ভিড় করেছেন ঋতুপর্ণার বাড়িতে। কেউ কেউ মিষ্টি নিয়েও এসেছেন। ঋতুদের বাড়ির পাশেই এক চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন ১০ থেকে ১২ ব্যক্তি। সবার মুখেই তখন ঋতুদের জয়ের গল্প। তাঁদের কেউ টেলিভিশন, আবার কেউ মুঠোফোনে গতকাল রাতে খেলা দেখেছেন। সবার চোখেমুখেই উচ্ছ্বাস।

গ্রামের মনোবী চাকমা ও সুমন চাকমা গণমাধ্যম কে  বলেন, ‘ঋতুপর্ণা চাকমার গোল উৎসবে আমরা গ্রামের মানুষ সবাই খুশি হয়েছি। তাঁর কারণে অবহেলিত মঘাছড়ি গ্রামটি মানুষ চিনতে পারছে। এখন এই গ্রাম সবাই চেনে।’

ঋতুপর্ণা চাকমার শিক্ষক বীরসেন চাকমা গণমাধ্যম কে  বলেন, ‘গতকাল বাংলাদেশ-মিয়ানমারের খেলাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখেছি। ঋতুর জোড়া গোলের কারণে বাংলাদেশ ২-১ গোলে জয়ী হয়েছে। ঋতুপর্ণা চাকমা ছাড়াও মণিকা চাকমা ও গোলরক্ষক রুপনা চাকমাও ভালো খেলেছেন। তাঁদের ভালো ফলের জন্য প্রতিবার খুবই আনন্দ পাই। আমি তাঁদের নিজের সন্তানের মতো দেখি।’