ঢাকা   মঙ্গলবার ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২

টানা পতনে পুঁজি বাজারে হতাশার ছায়া, সূচক ধসে

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৩২, ১০ নভেম্বর ২০২৫

টানা পতনে পুঁজি বাজারে হতাশার ছায়া, সূচক ধসে

 দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের ধারা যেন থামছেই না। প্রতিদিনই নতুন নিম্নতায় নেমে যাচ্ছে সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক। আজ (১০ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সাড়ে চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন রেকর্ড হয়েছে। একইসঙ্গে প্রধান সূচকও প্রায় সাড়ে চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। বিশ্লেষকদের মতে, বাজারে এখন বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসছে না—একদিকে তারা আতঙ্কিত, অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষার কৌশল নিচ্ছেন। ফলে বাজারে একপ্রকার স্থবিরতা নেমে এসেছে।

তবে ইতিবাচক দিকও আছে বলে মনে করছেন কিছু বিশ্লেষক। তাদের মতে, শেয়ারবাজার এমন এক পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যেখানে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য এখন তুলনামূলক আকর্ষণীয় দামে ভালো কোম্পানির শেয়ার কেনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, বাজারে টেকনিক্যাল রিবাউন্ড বা স্বল্পমেয়াদি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না।

অন্যদিকে, বাজারের নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন অনেকে। তাদের অভিযোগ, নিয়ন্ত্রক সংস্থার খামখেয়ালি ও একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণই বর্তমান অস্থিরতার মূল কারণ। তারা মনে করেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বারবার একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করছে—যার ফলে বাজারে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।

তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, শুধু নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়ী করলে সমাধান আসবে না। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সুদের হার ও মুদ্রাস্ফীতির চাপ, ব্যাংকিং খাতের অনিশ্চয়তা এবং কর্পোরেট আয়ের নিম্নগতি—এসব মিলেই বাজারকে দুর্বল করে তুলেছে। তাই বাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ—যেখানে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

সোমবারের বাজার পর্যালোচনা

আজ সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৯.১৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪,৮৬০.৭৫ পয়েন্টে— যা গত সাড়ে চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে গত ২ জুলাই সূচক ছিল ৪,৮৬৫.৩৩ পয়েন্ট। এদিন অপর দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসইএস কমেছে ১১.৮৯ পয়েন্ট এবং দাঁড়িয়েছে ১,১০.৭০ পয়েন্টে; ডিএসই–৩০ সূচক কমেছে ১৮.৪৯ পয়েন্টে নেমে ১,৯১০.৩০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, আজ মোট ৩৮৬টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে ৭০টির দর বেড়েছে, ২৭৫টির দর কমেছে এবং ৪১টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

লেনদেনের দিক থেকেও বাজার ছিল অত্যন্ত দুর্বল। আজ ডিএসইতে মোট ৩৫৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে— যা গত সাড়ে চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২৪ জুন লেনদেন হয়েছিল ৩৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকার। গতকাল ছিল ৪০২ কোটি ২০ লাখ টাকার লেনদেন, অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় আজ কমেছে ৪৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকার লেনদেন।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। আজ সিএসইতে ১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের ২২ কোটি ৯ লাখ টাকার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

এদিন সিএসইতে ১৭৩টি কোম্পানির মধ্যে ৩৭টির দর বেড়েছে, ১২৭টির কমেছে এবং ৯টির দর অপরিবর্তিত ছিল। সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৪০.১৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩,৭৪৩.৩৭ পয়েন্টে; আগের দিন সূচক কমেছিল ৮৬.০৬ পয়েন্ট।