
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বেশ কিছু ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থার অবনতি ঘটে, যার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিকভাবে ৯টি এনবিএফআই বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশের বড় অঙ্কের প্রাতিষ্ঠানিক আমানতও আটকে রয়েছে দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। পাঁচটি মার্জারপ্রাপ্ত দুর্বল ব্যাংকের কাছে রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর)। এছাড়া ২০টি দুর্বল এনবিএফআই-তে আটকে আছে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রাতিষ্ঠানিক আমানত, যার মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠান অতি দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কাছে পাওনা ১০ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংকের কাছে ৮ হাজার ৬৩১ কোটি, এক্সিম ব্যাংকের কাছে ৮ হাজার ১৫৭ কোটি, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে ৪ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা রয়েছে। এছাড়া পদ্মা ব্যাংকসহ অন্যান্য দুর্বল ব্যাংকেও বিপুল পরিমাণ আমানত আটকে আছে।
বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া ৯টি এনবিএফআই-র মধ্যে:
এফএএস ফাইন্যান্স: ৯৯.৯৩% ঋণ খেলাপি, লোকসান ১৭১৯ কোটি টাকা।
ফারইস্ট ফাইন্যান্স: ৯৮% ঋণ খেলাপি, লোকসান ১০১৭ কোটি টাকা।
বিআইএফসি: ৯৭.৩০% ঋণ খেলাপি, লোকসান ১৪৮০ কোটি টাকা।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং: ৯৬% ঋণ খেলাপি, লোকসান ৪২১৯ কোটি টাকা।
পিপলস লিজিং: ৯৫% ঋণ খেলাপি, লোকসান ৪৬২৮ কোটি টাকা।
আভিভা ফাইন্যান্স: ৮৩% ঋণ খেলাপি, লোকসান ৩৮০৩ কোটি টাকা।
প্রিমিয়ার লিজিং: ৭৫% ঋণ খেলাপি, লোকসান ৯৪১ কোটি টাকা।
জিএসপি ফাইন্যান্স: ৫৯% ঋণ খেলাপি, লোকসান ৩৩৯ কোটি টাকা।
প্রাইম ফাইন্যান্স: ৭৮% ঋণ খেলাপি, লোকসান ৩৫১ কোটি টাকা।
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান বলেন, “শুধু কমিশন বাণিজ্য নয়, রাজনৈতিক প্রভাব এবং উচ্চ সুদের লোভের কারণে এসব প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়েছে। তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও এস আলমের প্রভাব বিস্তার ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়।”
খাত সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, রাজনৈতিক প্রভাব, কমিশন বাণিজ্য ও উচ্চ সুদের লোভে এসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে দুর্বল অবস্থায় আছে, যা এখন বড় সংকটের কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “প্রতিষ্ঠানগুলো কোথায় টাকা রাখবে তা তাদের নিজস্ব নীতি। কিন্তু মূল সমস্যা দুর্নীতি, যা না থামলে এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন।”