ঢাকা   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

আবু সাঈদের কবর থেকে নতুন শপথে এনসিপি

আবু সাঈদের কবর থেকে নতুন শপথে এনসিপি

পহেলা জুলাই, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর এক বছর পূর্তি। ঠিক এক বছর আগে এই পহেলা জুলাই, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করেছিলাম। সেই আন্দোলনে আবু সাঈদসহ শরিক হয়েছিল হাজার হাজার তরুণ ছাত্রজনতা। আমরা দেখেছি, সেই কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এই আন্দোলন গণবিস্ফোরণে রূপ নেয়, গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটায়। এই পতনের পেছনে গৃহালোকে পরিণত হয়েছিল আবু সাঈদের মৃত্যু।

আজ মঙ্গলবার সকালে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা যখন আমরা শহীদ মিনার থেকে শুনতে পেয়েছিলাম, পুরো বাংলাদেশ শোকে দ্রোহে কেঁপে উঠেছিল। ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে আন্দোলন অন্যদিকে মোড় নেয়। হাজারো তরুণ রাজপথে নেমে আসে, সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ আর নতুন বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা ঘোষণা করে।”

তিনি বলেন, “আমরা আমাদের সেটি জুলাই পদযাত্রা বলেছি—‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’। আমরা স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছি, তার ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও আমরা দাঁড়িয়েছি। এখন দরকার একটি নতুন রাষ্ট্র গঠনের জন্য উদ্যম। সেই রাষ্ট্র গঠনের জন্যই আমরা এই জুলাই পদযাত্রা করছি। আমরা সারা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলবো, ৬৪ জেলার মানুষের সঙ্গে কথা বলবো, তাদের কথা শুনবো। আবু সাঈদরা যে স্বপ্নে জীবন দিয়েছে, সেই আকাঙ্ক্ষা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরবো। তাই আজ আমরা পীরগঞ্জের পবিত্র মাটি থেকে এই পদযাত্রা শুরু করেছি, যেখানে আবু সাঈদ শায়িত আছেন।”

তিনি আরও বলেন, “আবু সাঈদ যেভাবে পুলিশের বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল, এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সে ছিল আমাদের প্রেরণা। এখন আবু সাঈদের মতো অন্যান্য সকল শহীদ ও আহত যোদ্ধারা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।”

নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমাদের যে তিনটি দাবি ছিল—বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান—সেই তিনটি দাবি আজ আবু সাঈদের কবর থেকে আবারও উচ্চারণ করছি। একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে অবশ্যই এই তিন দাবির ভিত্তিতে এগোতে হবে। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান দিতে হবে। ‘জুলাই ঘোষণা পত্র’ এবং ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে টালবাহানা চলছে। আমরা হুঁশিয়ারি দিচ্ছি, যদি কেউ মনে করেন এই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গেছে, তারা ভুল ভাবছেন।”

তিনি বলেন, “আবু সাঈদের কবর থেকে ঘোষণা করছি—আমরা বাংলার প্রতিটি প্রান্তে যাবো, বাংলার তরুণ ছাত্র-শ্রমিকদের রাজপথে নামতে আহ্বান জানাবো। ৩ আগস্ট ছাত্র, শ্রমিক, জনতাকে নিয়ে ঢাকায় ঢুকবো। আমাদের দাবি আদায় করেই ছাড়বো, ইনশাআল্লাহ।”

এর আগে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র নেতৃবৃন্দ। ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র প্রথম দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদনে মঙ্গলবার সকালে পীরগঞ্জের বাবনপুরে পৌঁছান কেন্দ্রীয় নেতারা।

সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদের পিতা মকবুল হোসেনসহ স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে কবর জিয়ারত শেষে তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন—কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারীসহ আরও অনেকে। এছাড়াও জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক মাসুম বিল্লাহসহ জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, কোটা বিরোধী আন্দোলনে গত বছরের ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে পার্কের মোড়ে নিহত হন।