জাতীয় সংসদের ক্ষমতা সংসদ নেতার কাছে কেন্দ্রীভূত থাকায় সংসদীয় কমিটিগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান সংগঠনটি বলেছে, কোনো সংসদীয় কমিটির তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণ হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অনেক ক্ষেত্রে কমিটি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে রক্ষায় কাজ করে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়। আজ রোববার দুপুরে ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘সংসদীয় কমিটির কার্যকারিতা: চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ফাতেমা আফরোজ ও জুলিয়েট রোজেটি। নবম ও দশম সংসদের কমিটির ওপর গবেষণা চালিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিটিতে দলীয় প্রধান ও দলীয় সিদ্ধান্তের প্রভাব কাজ করে। কমিটির সভাপতিকে সংসদ নেতার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষ প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা ও নির্দেশে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়ে থাকে। কমিটিগুলো প্রধানমন্ত্রীর মন বুঝে কাজ করে। প্রধানমন্ত্রীও তাঁর মতের বাইরে কোনো সিদ্ধান্তকে প্রশংসা করেন না। সংবিধান প্রধানমন্ত্রী বা সংসদ নেতাকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়ায় তা গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। টিআইবি বলেছে, কমিটিতে দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্তের সংখ্যা কম। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রভাব বিস্তার করে। যে কারণে মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি বন্ধুদের দেওয়া ক্রেস্ট জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি আগের প্রতিমন্ত্রীকে নির্দোষ বলেছে। কারণ আগের প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে একই কমিটির সভাপতি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নবম সংসদে আটটি কমিটিতে ১৯ জন সাংসদের ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত ছিল। দশম সংসদ তিনটি কমিটিতে চারজন সদস্যের ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সদস্যরা কমিটিকে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। প্রতিবেদনে সংবিধানের ৭৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করে সংসদীয় কমিটিকে সাক্ষী তলব, সাক্ষ্যগ্রহণ ও দলিলপত্র তলব করার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া প্রতিবছর কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের আর্থিক তথ্য হালনাগাদ করে প্রকাশ করা, কোনো সদস্যের ব্যবসায়িক স্বার্থ থাকলে তাঁকে সেই কমিটিতে না রাখা, আগের সরকারের কোনো মন্ত্রীকে পরের সংসদের কোনো কমিটিতে সভাপতি না করা, ৫০ শতাংশ কমিটির সভাপতি হিসেবে বিরোধী দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া, সংসদে প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে কমিটিতে নারী সদস্যদের সভাপতি ও সদস্য করা, জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় ছাড়া সংসদীয় কমিটির বাকি সভাগুলো সরাসরি সংসদ টিভিতে প্রচার করা ইত্যাদি সুপারিশ করা হয়। অনুষ্ঠানে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘১৯৯১ সাল থেকে সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেন্দ্রীভূত। তিনিই একাধারে দলের প্রধান, সরকার প্রধান, আবার সংসদ নেতাও। বলা যেতে পারে দেশে নির্বাচিত একনায়কতন্ত্র চলছে। যে কারণে সংসদীয় কমিটি কার্যকর হতে পারছে না।’ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কমিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়ন হয় না। এতে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া কমিটির কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি রয়েছে।