ঢাকা   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

জ্বর নাকি ডেঙ্গু? কখন ভয় পাবেন, জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

জ্বর নাকি ডেঙ্গু? কখন ভয় পাবেন, জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

এবার বছরজুড়ে ডেঙ্গু রোগী ছিল। তবে ১৪-১৫ দিন ধরে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তির চেয়ে বহির্বিভাগে ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী আসার হার বেশি।

ল্যাংড়া জ্বর বা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা হুইলচেয়ারে করে আসছেন। কোভিড ও ইনফ্লুয়েঞ্জায় জ্বরের সঙ্গে সর্দিকাশি ও গলাব্যথা থাকে। তবে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জ্বর থাকলেও সর্দিকাশি থাকে না। রোগীদের গায়ে ব্যথা থাকে। গায়ে ফুসকুড়ি (র‌্যাশ) থাকতে পারে, না–ও থাকতে পারে। ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, চোখের পেছনে, পিঠ-কোমর ও মাংসপেশিতে ব্যথা থাকে। আর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে দেহের গিঁটে গিঁটে ব্যথা থাকে। পা ফুলে যায়। গায়ে ফুসকুড়ি থাকে। ব্যথার মাত্রা এত বেশি থাকে যে রোগী হাঁটতে পারেন না। চেম্বারে এমন রোগীদের অন্যের কাঁধে ভর করে বা হুইলচেয়ারে করে আসতে দেখা যায়। এ সময়ে গায়ে ব্যথাসহ জ্বর হলে ডেঙ্গু হয়েছে কি না, তা জানতে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া উচিত। চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। ডেঙ্গুর তিন-চার দিন পর জ্বরের প্রকোপ কমে এলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। অনেকের ফুসফুসে পানি জমে যেতে পারে। রক্তচাপ কমে যেতে পারে। অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে যে প্লাটিলেট কমে গেলে বিপদ বেশি। কিন্তু প্লাটিলেটের চেয়ে রক্তচাপ কমে গেলে ভয় বেশি। কারও প্লাটিলেট যদি ৫ হাজারেও নেমে যায়, কিন্তু রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে তাহলে ঝুঁকি নেই। রক্তচাপ নেমে গেলে রোগী ‘শকে’ চলে যায়। তাই প্লাটিলেট নিয়ে অস্থির না হয়ে রক্তচাপের দিকে নজর রাখা বেশি জরুরি। রক্তচাপ কমে গেলে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া হলে রোগীকে স্যালাইন দিতে হবে। চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুঝুঁকি কম, কষ্ট বেশি। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ শতাংশ এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগী তিন মাস পর্যন্ত অসুস্থ থাকতে পারেন, গায়ে ব্যথা থাকতে পারে। ৫ থেকে ৭ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে সুস্থ হতে বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া মশাবাহিত রোগ হওয়ায় মশা নিধনে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের নজর বাড়ানো প্রয়োজন। সেই সঙ্গে জনগণকে সচেতন হতে হবে। তাঁদের বিবেচনায় রাখতে হবে যেকোনো পাত্রে যেমন টব, টায়ারে যেন পানি জমে না থাকে। বাথরুমের কোনায় পানি জমে থাকলে তা মুছে ফেলতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে একসঙ্গে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করতে হবে।