facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ মার্চ মঙ্গলবার, ২০২৪

Walton

পুঁজিবাজার চালুর সিদ্ধান্ত দেবে কে অর্থমন্ত্রণালয় নাকি বিএসইসি


১১ মে ২০২০ সোমবার, ০৭:০০  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


পুঁজিবাজার চালুর সিদ্ধান্ত দেবে কে অর্থমন্ত্রণালয় নাকি বিএসইসি

চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন চালুর জন্য অনেকগুলো বিষয়ে ছাড় চেয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন করেছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কিন্তু কোরাম সংকটের কারণে বিএসইসির পক্ষে এ মুহূর্তে কমিশন সভার মাধ্যমে ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া সরকারি ছুটির এই সময়ে লেনদেন চালু করতে হলে জরুরি সেবার আওতায় পুঁজিবাজারও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যা কমিশনের এখতিয়ারে নেই। তাই বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছে বিএসইসি। যদিও অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে পুঁজিবাজার চালুর এখতিয়ার বিএসইসির কাছেই। ফলে পুঁজিবাজার চালুর বিষয়ে কে সিদ্ধান্ত দেবে—অর্থ মন্ত্রণালয় নাকি বিএসইসি—সে প্রশ্ন উঠেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (এফআইডি) কর্মকর্তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে লেনদেন চালুর বিষয়ে ডিএসইর প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিএসইসি। এক্ষেত্রে আইনি ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার বিএসইসির। পুঁজিবাজারকে জরুরি সেবার আওতায় আনা সম্ভব কিনা, সেটি মন্ত্রণালয় দেখছে। অন্তত স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ঈদের আগে পুঁজিবাজার খোলার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ইতিবাচক। এতে যেসব বিও হিসাবে নগদ অর্থ জমা রয়েছে, বিনিয়োগকারীরা সে অর্থ তাদের প্রয়োজনে উত্তোলন করার সুযোগ পাবেন।

জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, আইনিভাবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বিএসইসির। ফলে পুঁজিবাজার চালুর বিষয়টি তাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। পুঁজিবাজারকে জরুরি সেবার আওতাভুক্ত করার ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো করণীয় রয়েছে কিনা, সেটি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এর আগে ৩ মে ডিএসইর পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন চালুর জন্য কমিশনের কাছে অনেকগুলো বিষয়ে ছাড় চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে পাবলিক ইস্যু রুলস, লিস্টিং রেগুলেশন, স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি বিধিমালাসহ কমিশনের বেশকিছু আদেশ ও প্রজ্ঞাপন পরিপালনের বাধ্যবাধকতা শিথিল করার প্রস্তাব দিয়েছিল ডিএসই। এসব বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত ও সম্মতি পেলে স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষে লেনদেন চালু করা সম্ভব। আর এসব বিষয়ে ছাড় ও শিথিলতা দিতে হলে বিএসইসির কমিশন সভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চলতি মাসের ২ তারিখে বিএসইসির কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামীর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে বিএসইসিতে সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন এবং আরেক কমিশনার খোন্দকার কামালুজ্জামান দায়িত্বে রয়েছেন। কমিশন সভা করতে হলে চেয়ারম্যান ও কমিশনারসহ ন্যূনতম তিনজনের উপস্থিতিতে কোরাম পূর্ণ করতে হয়। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতায় এটি সম্ভব হচ্ছে না। নতুন কমিশনার নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত কমিশন সভার মাধ্যমে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। ফলে ডিএসইর প্রস্তাবের বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না বিএসইসি। এতে পুঁজিবাজারে লেনদেন চালুর বিষয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, ডিএসইর পক্ষ থেকে অনেকগুলো বিষয়ে ছাড় চাওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে কমিশন সভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু বর্তমানে কোরাম না থাকার কারণে কমিশন সভা করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে লেনদেন চালু করতে হলে পুঁজিবাজারকে জরুরি সেবার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর এটি কমিশনের এখতিয়ারবহির্ভূত বিষয়। ফলে সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে ডিএসইর প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

অবশ্য ১০ মে থেকে পুঁজিবাজার চালুর কথা জানালেও এরই মধ্যে সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটির সঙ্গে সংগতি রেখে ১৬ মে পর্যন্ত পুঁজিবাজার বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়েছে ডিএসই। দেশের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জটির কর্মকর্তারা বলছেন, পুঁজিবাজার বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হলেও যদি এ সময়ের মধ্যে বিএসইসির কাছ থেকে সম্মতি পাওয়া যায় তাহলে লেনদেন চালু করা সম্ভব হবে।

প্রতি বছরই ঈদের আগে পুঁজিবাজারে লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ সময় অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে অর্থ উত্তোলন করেন। কিন্তু বর্তমানে পুঁজিবাজার বন্ধ থাকায় অনেক বিনিয়োগকারী তাদের জরুরি প্রয়োজনেও শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন না। তাছাড়া অনেক বিনিয়োগকারীর বিও হিসাবে নগদ অর্থও রয়েছে। পুঁজিবাজার বন্ধ থাকার কারণে এ অর্থও উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর প্রথম দফায় সাতদিন সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয় এবং দ্বিতীয় দফায় তিনদিন সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। এরপর ১১ দিন বাড়িয়ে সাধারণ ছুটি ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এবং পরে আরো ১০ দিন বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত করা হয়। আর সর্বশেষ সাধারণ ছুটির মেয়াদ ১১ দিন বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। সরকারের সাধারণ ছুটির সঙ্গে সংগতি রেখে ধাপে ধাপে পুঁজিবাজার বন্ধের মেয়াদও বাড়িয়েছে ডিএসই।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: