facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

মুনাফার আশায় শেয়ারে বিনিয়োগে নিঃশ্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারী


২৪ জানুয়ারি ২০২২ সোমবার, ০৯:৫০  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার বিজনেস24.কম


মুনাফার আশায় শেয়ারে বিনিয়োগে নিঃশ্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারী

দেশের পুঁজিবাজারে অন্তত বিশটি কোম্পানির শেয়ার দর তলানিতে ঠেকেছে। এরপরও ক্রেতা ওইসব শেয়ারের ক্রেতা নেই। অথচ এসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ৫ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত শেয়ারের দাম বেড়েছিল। অর্থাৎ ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ১০০ টাকারও বেশি দরে বিক্রি হয়েছিল। সেই শেয়ার এখন সর্বনিম্ন ৩ টাকায় নেমেছে।

শেয়ারগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রকৌশল ও ওষুধ খাতের একটি করে দুটি কোম্পানি, ব্যাংক খাতের দুটি, আর্থিক খাতের ছয়টি এবং বস্ত্র খাতের দশটি কোম্পানির শেয়ার। মুনাফার আশায় এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করে পথে বসেছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একযুগের মধ্যে সবচেয়ে চাঙ্গা এখন দেশের পুঁজিবাজার। এই চাঙ্গা বাজারেও যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের (১০ টাকা) নিচে, এই কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই ২০১০ সালের পর তালিকাভুক্ত হয়েছে। তালিকাভুক্ত হওয়ার আগের কোম্পানির অবস্থা অনেক ভালো দেখিয়েছে। তালিকাভুক্ত হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে বেশি দামে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। এখন কোম্পানিগুলো লোকসানে রয়েছে। ফলে বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না কোম্পানিগুলো। আর তাতে শেয়ারের দাম কমে অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করছে।

ডিএসইর তথ্য মতে, দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখা প্রতিষ্ঠানের একটি ব্যাংক খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। ২০১০ সালে ব্যাংকটির শেয়ারের দাম ছিল আকাশ ছোঁয়া। সেই শেয়ার গত বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) সর্বশেষ বিক্রি হয়েছে ৭ টাকা ৪০ পয়সাতে। ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত বছরের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছে। কিন্তু তারপরও শেয়ারটির দাম একটি ডিমের চেয়ে কম। ফলে ১৯৮৪ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানটির ৩০৬ কোটি ৬৪ লাখ ১৮ হাজার ৬৩৯টি শেয়ারধারী বিনিয়োগকারীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।

একইভাবে বিপাকে রয়েছেন আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৬৬ কোটি ৪৭ লাখ ২ হাজার ৩০০ শেয়ারধারী। কারণ এই ব্যাংকের শেয়ারের দাম এখন ৫ টাকা ১০ পয়সা।

১২ টাকা প্রিমিয়ামসহ মোট ২২ টাকায় ২০১৩ সালে প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত হওয়া অ্যাপলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের শেয়ার এখন ৮ টাকা ৯০ পয়সা। ২০১৮ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৩ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিটি এখন লোকসানে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির ৪০ কোটি ১৩ লাখ ৮ হাজার ৫০০টি শেয়ারধারী বিপাকে। ২০০১ সালে ওষুধ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কেয়া কসমেটিকসের শেয়ারের দাম ৭ টাকা ৭০ পয়সা।

পিকে হালদারের লোপাটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর্থিক খাতের তিনটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ২০০৫ সালে তালিকাভুক্ত প্রিমিয়াম লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার ৭ টাকা ৯০ পয়সা। কোম্পানিটি ২০১৯ সালে থেকে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো মুনাফা দিতে পারেনি।

পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস ২০১৪ সাল থেকে কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। আর্থিক প্রতিবেদনে লোকসান দেখাচ্ছে। এই লোকসানের কারণে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৩ টাকা। একইভাবে ২০১৯ সাল থেকে লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের শেয়ার এখন ৬ টাকা ৬৯ পয়সা। কোম্পানি সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

এছাড়াও একই খাতের প্রতিষ্ঠান ২০০৮ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের শেয়ার ৭ টাকা। ২০০৭ সালে তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ক্যাপিটালের শেয়ারের দাম ৯ টাকা ৭০ পয়সাতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির শেয়ারের দাম ৭ টাকা ১০ পয়সা। বর্তমানে এসব কোম্পানি লোকসানে রয়েছে।

বস্ত্র খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দশটি কোম্পানিই লোকসানে রয়েছে। লোকসানে থাকা দশটি কোম্পানির মধ্যে জাহিন টেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছে ৮ টাকায়। একই গ্রুপের কোম্পানি জাহিন স্পিনিংয়ের শেয়ার ৯ টাকা ১০ পয়সাতে লেনদেন হয়েছে। কোম্পানি দুটি ২০২০ সাল থেকে লোকসানে দেখাচ্ছে।

২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেডের শেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকা ৭০ পয়সা। ২০১৭ সালে পর থেকে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানি। এ কোম্পানিগুলো এখন লোকসানে রয়েছে।

একই খাতের কোম্পানি আরএন স্পিনিং মিলসের শেয়ার ৬ টাকা ৯০ পয়সা। নূরানি ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার ৭ টাকা ৬০ পয়সা। জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড ৬ টাকা ৩০ পয়সা। ফ্যামিলি টেক্স ৪ টাকা ৮০ পয়সা। ডেল্টা স্পিনিং লিমিটেড ৯ টাকা ৬০ পয়সা। সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল ৮ টাকা ৫০ পয়সা।

২০১৯ সালে তালিকাভুক্ত রিং শাইন টেক্সটাইল কোম্পানির শেয়ার ১০ টাকা ৫০ পয়সা। ২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার ১০ টাকা ৩০ পয়সা। এসব কোম্পানির ২০১৯ এবং ২০২০ সাল থেকে আর্থিকভাবে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। ফলে শেয়ারগুলোর দাম বাড়ছে না। এসব কোম্পানির শেয়ার কিনে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

বিনিয়োগকারী অনিক সরকার বলেন, ২০১০ সালে এনবিএল কিনে ১০ লাখ টাকা ধরা খাইছি। এখন দিন দিন আরও কমছে।

আরেক বিনিয়োগকারী রুপক মাহবুব বলেন, ভালো পারফর্মেন্স দেখে আরএন স্পিনিং ও ফ্যামিলি টেক্স কিনেছিলাম। এখন এই দুই কোম্পানির শেয়ারে ৫ লাখ টাকা লস। এই টাকা আর উঠবে বলে মনে হচ্ছে না।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এখন যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের নিচে আছে, এগুলো হয়েছে কোম্পানিগুলোর মালিকদের কারণে। এই কোম্পানির মালিকরাই শেয়ারহোল্ডারদের পথে বসিয়েছে। তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।

ডিএসইর পরিচালক শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, কোম্পানিগুলো দেনার তলে পড়েছে। তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত হওয়ার বছর থেকেই কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তারা বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়ে শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়েছে। ভালো দামে তাদের শেয়ারও বিক্রি করে দিয়েছে। পাশাপাশি লোকসানে পড়ে গুড-উইল (সুনাম) হারিয়ে ফেলেছে। তাই কোনো বিনিয়োগকারী এখন শেয়ার কিনছে না। ফলে দামও কমেছে।

এছাড়াও কেউ জেনে শুনে লোকসান করতে আসবে না। যখন এসব কোম্পানি ভালো করবে, অটোম্যাটিকেলি শেয়ারের দাম বাড়বে বলে জানান তিনি।

লোকসান থেকে উত্তোলনের জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেশ কয়েকটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের(বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, যেসব কোম্পানি খারাপ করছে, দিনদিন অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। এই কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। স্বাধীন পরিচালকদের নেতৃত্বে কোম্পানিগুলোতে কাজ চলছে। এরই মধ্যে সফলতা আসতে শুরু করেছে। উৎপাদন বন্ধ থাকার কোম্পানিগুলো উৎপাদনের ফিরতে শুরু করেছে। আশা করছি, কোম্পানিগুলোর ভালো করবে। বিনিয়োগকারীরাও শেয়ারের যৌক্তিক মূল্য পাবেন।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: