facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

যে কারণে ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী নেওয়ার প্রস্তাব নাকচ


২০ মার্চ ২০১৮ মঙ্গলবার, ০২:০৭  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


যে কারণে ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী নেওয়ার প্রস্তাব নাকচ

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত শেয়ারে চীনা জোটের বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে বেশকিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে তা সংশোধিত প্রস্তাব হিসেবে জমা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে ডিএসই। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি চীনা জোটের বিনিয়োগ প্রস্তাব বিষয়ে বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন যাচাই বাছাই শেষে সোমবার বিএসইসির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জরুরি সভা শেষে বিএসইসির মুখপাত্র এম সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বিএসইসি জানায়, ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী বিষয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ সমন্বয়ে গঠিত চীনা জোটের দেয়া প্রস্তাবে (শেয়ার ক্রয়চুক্তিসহ) সম্মতি দেয়া সম্ভব নয়। যদিও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রস্তাবে দেশের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও ডিএসইর সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ পরিপন্থি অধিকাংশ শর্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এ অবস্থায় শর্তপূরণ সাপেক্ষে ডিএসইকে সংশোধিত প্রস্তাব জমা দেয়ার সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

শর্তগুলো হচ্ছে- শেয়ার ক্রয় চুক্তিতে এমন কোন শর্ত থাকতে পারবে না, যা দেশের আইন, ডিএসইর সাধারণ শেয়ারহোল্ডার ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নের পরিপন্থি। ডিএসইর সংঘস্বারক পরিবর্তনের কোন প্রস্তাব দিতে পারবেনা চীনা জোট। শেয়ার ক্রয়চুক্তিসহ জোটের বিনিয়োগ প্রস্তাবটি বিএসইসিতে চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানোর আগে ডিএসইর সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি নিতে হবে। বিএসইসির তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষন ও চীনা জোটের শর্ত প্রত্যাহারের বিষয়টি সাধারন সভায় নোটিশের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। চীনা জোটের চুড়ান্ত প্রস্তাব, সংশোধিত শেয়ার ক্রয়চুক্তি ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য দলিলাদিসহ সাধারণ সভার কার্যাবলী বিএসইসিতে পাঠাতে হবে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বিএসইসি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ডিএসইর এ প্রস্তাবটিকে অসম্পূর্ন ও দেশীয় আইনের সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব শর্ত ডিএসইর অন্য অংশীদারদের স্বার্থক্ষুন্ন করবে। অবশ্য গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর দেয়া প্রস্তাব যাচাই বাছাই করে এমন অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে। এক্ষত্রে তদন্ত কমিটির ব্যাখ্যার প্রেক্ষিতে চীনা জোটের বিভিণœ শর্ত প্রত্যাহার ও সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী অংশের শেয়ার ক্রয় বিষয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি এক উন্মুক্ত দরপত্রে ভারতীয় ও চীনা জোট অংশ নেয়। এতে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ারের প্রতিটি ২২ টাকা দরে কেনার প্রস্তাব করে চীনা জোট। অপরদিকে ভারতের ন্যশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বে ভারতীয় জোট ২৫ দশমিক শূণ্য ১ শতাংশ শেয়ারের প্রতিটি ১৫ টাকায় কেনার প্রস্তাব জমা দেয়। দরপত্র অণুযায়ী ডিএসইর বোর্ড চীনা জোটের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে বিএসইসিতে প্রস্তাব পাঠায়। চীন জোটের অসম্পূর্র্ণ দরপ্রস্তাব অনুমোদনের জন্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএসইসিতে পাঠায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ, তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করে বিএসইসি। এ প্রস্তাব যাচাই বাছাইকালে বিএসইসির তদন্ত কমিটি শেয়ার ক্রয়চুক্তিসহ প্রস্তাবের বিভিন্ন শর্তের ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠায়। কমিটির ব্যাখার পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ার ক্রয়সংক্রান্ত দরপ্রস্তাবে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে ১৬টি পুরোপুরি প্রত্যাহার করে সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত চীনের জোট। এছাড়া তিন শর্তে পরিবর্তন আনে।
পরিবর্তিত শর্তে চুক্তিটি যুক্তরাজ্যের বদলে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী করতে সংশোধনী প্রস্তাব দেয় চীন জোট। অবশ্য চুক্তির বিষয়ে বিবাদ প্রশ্নে লন্ডনের আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন অনুযায়ী করার পূর্বশর্ত বহাল রয়েছে। এছাড়া ডিএসইর ন্যূনতম শেয়ারধারীর সঙ্গে কোনো চুক্তির বিষয়ে স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন সংক্রান্ত ধারা থেকে চীন জোটের অব্যাহতির শর্ত বহাল রয়েছে।

চীন জোটের শর্ত ছিল শেয়ারদর নির্ধারণ। এক্ষেত্রে ২০১৭ সালের ৩০ জুন হিসাব বছরের অনিরীক্ষিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে চীন জোট ডিএসইর প্রতিটি শেয়ার ২২ টাকা প্রস্তাব করে। কিন্তু যদি পরবর্তী সময়ে ডিএসইর সম্পদমূল্যে কোনো পরিবর্তন ঘটে, তাহলে দরপ্রস্তাবেও পরিবর্তন আসবে বলে শর্তে উল্লেখ ছিল। এটি বহাল রাখলেও একই বিষয়ে ডিএসইর কর্মকর্তাদের সুবিধা ও শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য পৃথক করার যে শর্ত ছিল, তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে চীন জোট।

কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার জন্য চীন জোট আরো যেসব শর্ত দিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে ছিল- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অবসায়ন, লিকুইডেটর নিয়োগ, স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রমে পরিবর্তন, মেধাসত্তসংক্রান্ত যে কোনো পণ্য ক্রয়, আইপিওতে শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ, উদ্যোক্তা নির্ধারণ, প্রসপেক্টাস অনুমোদন, অডিটর নিয়োগে তাদের অনুমোদন নেওয়ার শর্ত আরোপ করে। এসব শর্তও প্রত্যাহার করে নেয় চীনা জোট।

এছাড়া ১০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ অথবা ঋণ দেওয়া-নেওয়া ও ১৫ শতাংশের অধিক যে কোনো স্থায়ী সম্পদের বিষয়ে চীন জোটের কাছ থেকে ডিএসইকে অনুমোদন নিতে হবে এমন শর্তও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এছাড়া ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন বা বিন্যস্তকরণ আইন ভঙ্গ করে একজন উপ-প্রধান কারিগরী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষমতা চেয়েছিল জোট। আইনের ভাষার ক্ষেত্রে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজী অনুসরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এসব শর্তও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। সেটেলমেন্ট গ্যারান্টি ফান্ড কন্ট্রিবিউশন বাদ বা স্থগিত রাখার শর্তও প্রত্যাহার করে নিয়েছে চীন জোট।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: