facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ এপ্রিল সোমবার, ২০২৪

Walton

যে কারণে হতাশা বাড়াচ্ছে লেনদেনে শীর্ষে থাকা কোম্পানি


১৬ মার্চ ২০২৪ শনিবার, ০৯:১৩  পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


যে কারণে হতাশা বাড়াচ্ছে লেনদেনে শীর্ষে থাকা কোম্পানি

দেশের শেয়ারবাজারে সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা বাড়াচ্ছে লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো। কারণ এসব কোম্পানি দুর্বল মানের, অথচ বেশ কিছুদিন ধরে তাদের শেয়ারেরই দাপট চলছে। অর্থাৎ মন্দা বাজারেও এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতন ঘটছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত বৃহস্পতিবার লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় ছিল গোল্ডেন সন, এসএস স্টিল, ফু–ওয়াং সিরামিক, ওরিয়ন ইনফিউশন, লাভেলো, গোল্ডেন হারভেস্ট, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস (বিবিএস), কর্ণফুলী ইনস্যুরেন্স, ফরচুন সুজ ও সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস। এর মধ্যে ওরিয়ন ইনফিউশন, লাভেলো ও কর্ণফুলী ইনস্যুরেন্স ছাড়া বাকি সাতটিই দুর্বল মানের কোম্পানি।

ঢাকার বাজারে এদিন মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় ছিল নতুন তালিকাভুক্ত এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, লুব–রেফ বাংলাদেশ, গোল্ডেন হারভেস্ট, ওয়াইম্যাক্স, বিবিএস, ডমিনেজ স্টিল, ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, কপারটেক ও জিপিএইচ ইস্পাত। মূল্যবৃদ্ধির তালিকারও অধিকাংশ কোম্পানি দুর্বল মানের।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় দীর্ঘদিন ধরে যেসব কোম্পানির দাপট চলছে, তার বেশির ভাগই লোকসানি ও বন্ধ। এসব শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের মধ্য হতাশা ছড়াচ্ছে এবং বাজারে বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা বলেন, শেয়ারবাজারে বর্তমানে লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় যেসব কোম্পানির দাপট দেখা যাচ্ছে, সেগুলোর অবস্থা পর্যালোচনা করলে বিনিয়োগের আগ্রহ তৈরি হওয়ার চেয়ে হতাশাই বেশি কাজ করে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, মন্দা বাজারেও গত দেড় মাসে গোল্ডেনসনের শেয়ারের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত ২৮ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ১২ টাকা ৪০ পয়সা। বৃহস্পতিবার সেই দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকায়। এদিন ডিএসইতে কোম্পানিটি লেনদেনের শীর্ষে ছিল। কয়েক বছর ধরে লোকসানি এ কোম্পানি ২০২২ সালে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। ২০২৩ সালে মাত্র ১ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। তা সত্ত্বেও বাজারে এ কোম্পানির শেয়ারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

একইভাবে এদিন লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে থাকা এসএস স্টিলের শেয়ারের দাম মন্দাবাজারেও মাত্র ৫ কার্যদিবসে প্রায় ২৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ২০ পয়সা। কোম্পানিটি এতই দুর্বল মানের যে সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এটির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ৩২৪–এ। শেয়ারবাজারে পিই রেশিও একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক। বিশ্লেষকেরা বলেন, যে কোম্পানির পিই রেশিও যত বেশি সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ তত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

এসএস স্টিলের পিই রেশিও ৩২৪। এর মানে হলো, বর্তমানে কোম্পানিটির যে আয় তা যদি অপরিবর্তিত থাকে তবে কোম্পানিটির শেয়ারে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে তা লভ্যাংশের মাধ্যমে ফেরত পেতে ৩২৪ বছর লাগবে। তা সত্ত্বেও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এ শেয়ারের দাম বাড়ছেই, লেনদেনেও এটি শীর্ষে উঠে এসেছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কারসাজিই এ ধরনের দুর্বল কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধির বড় কারণ। কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাতে বাজারের প্রতি ভালো বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা বাড়ছে।

লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার যে কটি কোম্পানির দরপতন সূচকের ওপর সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল রেনেটা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), বীকন ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, পূবালী ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক। এগুলো ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি।

জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউআইইউ) বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুসা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শেয়ারবাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো বিনিয়োগকারীদের জন্য হতাশাজনকই। যেসব শেয়ারের দাম দিনের পর দিন বাড়ছে, তা বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীর জন্য মোটেই আগ্রহী হওয়ার মতো নয়। এ কারণে বাজারে বিনিয়োগ বাড়ছে না। তবে ভালো কিছু শেয়ারের দাম যে পর্যায়ে নেমেছে, সেগুলোয় দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত বৃহস্পতিবার আরও কিছুটা কমে ৫ হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে নেমেছে। ২০২১ সালের ২৫ মের পর এটিই ডিএসইএক্স সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান।

ঢাকার বাজারে সপ্তাহের শেষ দিনে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। ডিএসইতে বৃহস্পতিবার লেনদেন হয় ৫১৫ কোটি টাকার শেয়ার, যা আগের দিনের চেয়ে ৩২ কোটি টাকা বেশি।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: