facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

তদন্তে বে-লিজিংয়ের লাভ-লোকসান: কঠোর বিএসইসি


২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ শনিবার, ০৯:১৫  এএম

স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার বিজনেস24.কম


তদন্তে বে-লিজিংয়ের লাভ-লোকসান: কঠোর বিএসইসি

২০২১ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে ৩৮ কোটি টাকা মুনাফা দেখিয়েও পরের তিন মাসে ৫২ কোটির বেশি লোকসান দেখানোয় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি বে লিজিংয়ের প্রান্তিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

এ লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে একটি তদন্ত কমিটি। সংস্থাটি মনে করছে, বে লিজিং যে প্রান্তিক প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে যে উত্থান পতন হয়েছে, সেটি স্বাভাবিক নয়।

সংস্থাটির উপ-পরিচালক কাজী মো. আল-ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক কাউসার আলী ও আতিকুর রহমানকে কমিটির দায়িত্ব দেয়া হয়।

কমিটিকে আগামী ২০ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানিটির ৯ মাসের অনিরীক্ষিত ও ১২ মাসের নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাবের মধ্যে কোনো কারসাজি হয়েছে কি না, ইনসাইডার ট্রেডিং আছে কি না, ওই অস্বাভাবিক আর্থিক হিসাবের কারণে শেয়ার দরে প্রভাব ও মার্কেট ম্যানুপুলেশন হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে কমিশন।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করে বে লিজিং নয় মাস পর সম্প্রতি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। তবে কোম্পানিটি যে প্রান্তিক প্রতিবেদন দিয়েছে, তা তৈরি করেছে বিস্ময়।

কোম্পানিটি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৭৫ পয়সা আয় দেখায়। কোম্পানিটির যে শেয়ারসংখ্যা, তার হিসাবে ৯ মাসে মুনাফা দাঁড়ায় ৩৮ কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার ২১৮ টাকা।

তবে গোটা অর্থবছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ৯৯ পয়সা লোকসান হয়েছে বলে জানানো হয়। অর্থাৎ ৯ মাসে যে পরিমাণ আয় হয়েছে, পরের তিন মাসে সেখান থেকে কমে গেছে এর চেয়ে বেশি।

এই হিসাবে ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৭৯ হাজার ৫৫৮ টাকা। অর্থাৎ এই তিন মাসে লোকসান হয়েছে ৫২ কোটি ৬৯ লাখ ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা।

অর্থাৎ শেষ ৩ মাসে শেয়ারপ্রতি (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২১) লোকসান হয়েছে ৩.৭৪ টাকা।

কোম্পানিটি তার লভ্যাংশ ঘোষণার পর শেয়ারপ্রতি আয়ে এই পরিবর্তনের একটি ব্যাখ্যা অবশ্য দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, তাদের ঋণ আদায় সন্তোষজনক ছিল না। আর অনাদায়ী এই ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে গিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় কমে গেছে।

বে লিজিং জানিয়েছে, গত অর্থবছরে মোট ৫৭ কোটি টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়েছে।

শেষ প্রান্তিকে এসে বড় সঞ্চিতি সংরক্ষণের কথা বলেছে, সেটা আগের তিন প্রান্তিকে কেন রাখা হয়নি- এমন প্রশ্নে কোম্পানি সচিব শারমিন আক্তার বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রভিশন রুল পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের বড় কয়েকজন গ্রাহক সময়মতো টাকা দেননি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপে আমাদের প্রভিশন করতে হয়েছে।’

চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, ‘নিয়ম হচ্ছে প্রতি কোয়ার্টারে প্রভিশন রাখতে হয়। একবারে বছর শেষে প্রভিশন রাখা এটা সঠিক নিয়ম নয়।’

প্রশ্ন উঠেছে, এই সঞ্চিতি কি কেবল শেষ তিন মাসে সংরক্ষণ করা হয়েছে। যদি তা-ই হয়, তাহলে ৯ মাসের মুনাফা দেখে যারা ভালো লভ্যাংশের আশায় শেয়ারে বিনিয়োগ করে লোকসানে পড়েছেন, তাদের দায়ভার কে নেবে?

এই লভ্যাংশ যে বিনিয়োগকারীদের পছন্দ হয়নি, সেটি লেনদেনেই স্পষ্ট। লভ্যাংশ প্রকাশের দিন কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে ১ টাকা ৪০ পয়সা। বর্তমান দর ২৩ টাকা ৯০ পয়সা। এটিই কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস, অর্থাৎ এর চেয়ে নিচে নামা আসলে সম্ভব নয়। এই বাধা না থাকলে দর কোথায় দাঁড়াত, সেটি জানা সম্ভব নয় কোনোভাবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে প্রতি তিন মাস অন্তর তাদের লাভ-লোকসানের হিসাব প্রকাশ করতে হয়, যাকে বলা হয় প্রান্তিক প্রতিবেদন। এর মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন কেবল নিরীক্ষিত থাকে, বাকি তিনটি প্রতিবেদন নিরীক্ষা না করার কারণে তাতে কারসাজির সুযোগ থাকে।

বিভিন্ন কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা গেছে, কোনো প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। তাতে শেয়ারদরও দেয় লাফ। কিন্তু চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তা কমে যায়।

গত শনিবার ঢাকার হোটেল ওয়েস্টিনে যৌথভাবে সিএমজেএফ ও বিএমবিএ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বে লিজিংয়ের এই প্রতিবেদন খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘যেসব বিনিয়োগকারী ৯ মাসে শেয়ার প্রতি ২.৭৫ টাকা দেখে বিনিয়োগ করল, তাকে কি এখানে দোষ দেয়া যাবে? সে তো ঠিকই ফান্ডামেন্টাল দেখে বিনিয়োগ করেছিল। এ ধরনের অ্যাকাউন্টস যারা প্রকাশ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বে লিজিং ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মুনাফা দেখায় শেয়ারপ্রতি ৩১ পয়সা।

যে প্রতিবেদন প্রকাশের কথা ছিল এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে, সেটি কোম্পানিটি প্রকাশ করে ৩০ সেপ্টেম্বর।

একই দিন প্রকাশ করা হয় দ্বিতীয় প্রান্তিকের তথ্যও। জানানো হয়, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে শেয়ারপ্রতি আয় হয় ৪৯ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৫ গুণ। ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল কেবল ২ পয়সা।

ওই বছরের ২৮ অক্টোবর প্রকাশ হয় কোম্পানিটির তৃতীয় প্রান্তিকের হিসাব। ওই প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় আবার দেয় লাফ। জানানো হয় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে শেয়ারপ্রতি আয় হয় ১ টাকা ৯৫ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৯১ পয়সা। তিন প্রান্তিক মিলিয়ে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়ায় ২ টাকা ৭৫ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ২ পয়সা।

কোম্পানিটি ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল, শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ১৪ পয়সা।

এবার আয় বাড়লে লভ্যাংশও বাড়তে পারে- এই আশায় যারা বিনিয়োগ করেছেন, তারা এখন হতাশ।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: