facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ০৬ মে সোমবার, ২০২৪

Walton

এক কোম্পানি খেলাপি হলেও ঋণ পাবে অন্য কোম্পানি


০৪ এপ্রিল ২০২৪ বৃহস্পতিবার, ১১:৪৩  এএম

স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার বিজনেস24.কম


এক কোম্পানি খেলাপি হলেও ঋণ পাবে অন্য কোম্পানি

খেলাপি গ্রাহকদের ঋণ নেওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা নতুন এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলেও গ্রুপভুক্ত অন্য প্রতিষ্ঠান ঋণ নিতে পারবে। তবে ব্যাংক দেখবে প্রতিষ্ঠানটি ইচ্ছাকৃত খেলাপি, নাকি যৌক্তিক কারণে খেলাপি হয়েছে। এসব বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।

গত বছরের জুলাই মাসে ব্যাংক কোম্পানি আইনে পরিবর্তন এনে ঋণখেলাপি গ্রাহকদের ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে, যেখানে নানা শর্ত দিয়ে তা অনুসরণ করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আগে এক প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে গ্রুপভুক্ত অন্য প্রতিষ্ঠানের ঋণ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। এরপরও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ লাগামছাড়া ভাবে বেড়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় সাড়ে ৬ গুণ হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, আদালতে স্থগিত থাকা, অবলোপন করা ও পুনঃ তফসিলি করা ঋণসহ বিপর্যন্ত ঋণের মোট পরিমাণ প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা।

বিশ্লেষকেরা অবশ্য মনে করেন, খেলাপি গ্রাহকদের ভেতরে যারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি, নতুন ঋণ দেওয়ার সময় তাদের চিহ্নিত করাই হবে সবচেয়ে কঠিন কাজ। বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো খেলাপি গ্রাহককে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনো ঋণ দিতে পারবে না। তবে এই আইনের অন্য ধারায় বলা হয়েছে, পরস্পর স্বার্থসংশ্লিষ্ট গ্রুপভুক্ত কোনো খেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি ইচ্ছাকৃত খেলাপি না হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তিসংগত কারণ আছে, তাহলে একই গ্রুপভুক্ত অন্য প্রতিষ্ঠান খেলাপি বলে গণ্য হবে না। এসব প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ঋণ দেওয়া যাবে।

এ জন্য বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে ইচ্ছাকৃত খেলাপি গ্রাহক হিসেবে তালিকাভুক্ত করার পর উক্ত তালিকার বিরুদ্ধে কোন ঋণগ্রহীতা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট আপিল করা হলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই গ্রুপের কোনো প্রতিষ্ঠানের ঋণের জন্য আবেদন করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন গ্রহণের জন্য ব্যাংকগুলোকে তাদের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন গ্রহণ সাপেক্ষে আবেদন করতে হবে। ঋণসুবিধা প্রদানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নেওয়া সিদ্ধান্তের সত্যায়িত কপি আবেদনপত্রের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করা আবেদনপত্রের সঙ্গে গ্রুপভুক্ত খেলাপি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির খেলাপি হওয়ার কারণ উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এই খেলাপি ঋণগ্রহীতা ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এ–সংক্রান্ত হালনাগাদ ঋণ তথ্য ব্যুরোর (সিআইবি) রিপোর্ট সংযুক্ত করতে হবে। সিআইবি রিপোর্টিংয়ে উক্ত খেলাপি ঋণগ্রহীতা ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা নন, এই মর্মে সংশ্লিষ্ট সব ঋণদাতা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে জমা দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দেওয়ার আগে খেলাপি হওয়ার যুক্তিসংগত কারণ, ঋণ আবেদনকারী সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব ও প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এবং পরিদর্শন দলের বিবেচনায় প্রয়োজনীয় বিষয়াবলি পর্যালোচনার লক্ষ্যে সরেজমিনে পরিদর্শন করা হবে। এর পরই ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদে আইন করে খেলাপিদের ঋণ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এটা আটকানোর ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেই। এরপরও কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: