facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ এপ্রিল সোমবার, ২০২৪

Walton

ঋণের টাকা হাতিয়েছেন ব্যাংকের পরিচালকরাই


১৩ জানুয়ারি ২০১৮ শনিবার, ০৩:৫৭  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


ঋণের টাকা হাতিয়েছেন ব্যাংকের পরিচালকরাই

কখনও নিজের ব্যাংক থেকে, কখনও অন্য ব্যাংক থেকে ঋণের টাকা তুলে নিয়েছেন পরিচালকরা।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ঋণ দিয়েছে সাত লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকের পরিচালকরা ঋণ নিয়েছেন এক লাখ ৪৩ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর পরিচালকের সংখ্যা এখন প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে সমঝোতাভিত্তিক বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন শতাধিক পরিচালক। এরা একজন আরেক জনের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এর বাইরে দুই ডজনের বেশি ব্যাংক থেকে পরিচালকরা আত্মীয়ের নামে আরো  প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘পরিচালক ব্যবসায়ী হতে পারেন। নিয়ম মেনে তিনি যেকোনো ব্যাংক থেকে ঋণও নিতে পারেন।  কোনো বাধা নেই। তবে সমঝোতা করে একজন পরিচালক আরেকজনের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়াটা অনৈতিক।’  তিনি বলেন, ‘আইন দিয়ে এদের ধরা যাবে না। এটা ব্যাংকিং খাতের জন্য উদ্বেগের বিষয়।’

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ জানান, তিনি যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ছিলেন, তখন এই ধরনের সমঝোতার অনৈতিক ঋণ দেওয়া-নেওয়ার কারণে ৩৪ জন পরিচালককে অপসারণ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর সেই ধরনের উদ্যোগ আর দেখা যায়নি। যদিও সমঝোতার অনৈতিক ঋণ দেওয়া-নেওয়ার ঘটনা কয়েকগুণ বেড়েছে। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংককে এ ব্যাপারে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকরা ঋণ নিয়েছেন ১১ হাজার ৯১০ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৯ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। এছাড়া, পরিচালকরা জনতা ব্যাংক থেকে ৮ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ৬ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকরা ব্যাংক এশিয়া থেকে ঋণ নিয়েছেন ৫ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা। ঢাকা ব্যাংক থেকে তারা নিজেদের পরিচয় দিয়ে ঋণ নিয়েছেন ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এর বাইরে আরো ৫০টি ব্যাংক থেকে পরিচালকরা প্রায় এক লাখ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকরা মেঘনা ব্যাংক থেকে  ৪২৮ কোটি টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংক থেকে  ৩৫৩ কোটি টাকা, মধুমতি ব্যাংক থেকে ৪০২ কোটি টাকা, এনআরবি ব্যাংক থেকে ১৭৪ কোটি টাকা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে  ৯৪৯ কোটি টাকা, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক থেকে  ৬২১ কোটি টাকা, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক থেকে ৫৮৮ কোটি টাকা, দি ফারমার্স ব্যাংক থেকে  ২০৮ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘সমঝোতা করে এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়াটা অনৈতিক হবে। আবার দেখা যাবে, এ ধরনের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় জামানতও থাকে না। ফলে পরবর্তীতে ব্যাংকের পর্ষদ ওই প্রতিষ্ঠানকে বেনামি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে খেলাপী ঘোষণা করে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ২৯টি ব্যাংকের পরিচালকেরা নিজের ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়েছেন ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে মেঘনা ব্যাংকের কয়েকজন পরিচালক ওই ব্যাংক নিয়েছেন ১০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। মিডল্যান্ড ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ১৮ কোটি টাকা, মধুমতি ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা, এনআরবি ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ২ কোটি ১০ লাখ টাকা, সীমান্ত ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৩৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারার ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৬৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

নিজেদের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া ব্যাংকগুলো হলো— ন্যাশনাল ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনও  পরিচালক তার মোট শেয়ারের ৫০ শতাংশের বেশি ঋণ নিজ ব্যাংক থেকে নিতে পারবেন না। এ কারণে পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে বেশি পরিমাণ ঋণ নেন।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের পরিচালক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘পরিচালকদের ঋণ নেওয়ার যে নীতিমালা রয়েছে, সেই নীতিমালা মেনেই সবাই ঋণ নেন। এছাড়া, পরিচালকদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী। ফলে যে কেউ নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে যেকোনও ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন। এতে দোষের কিছু নেই। তবে সমঝোতা করে একজন আরেকজনের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ঘটনাও এই সমাজে ঘটছে।’

এ প্রসঙ্গে ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে নিয়ম মেনে যে কোনও ব্যাংক থেকে পরিচালকরা ঋণ নিতে পারেন। তবে ভেতরে-ভেতরে সমঝোতা করে যদি ঋণ দেওয়া-নেওয়া হয়, নিয়ম না মেনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া ঋণ নেওয়া হয়, সেটা অনৈতিক।’

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: