facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

সংসদে নিজের লেখা কবিতা শোনালেন এরশাদ


২৯ জুন ২০১৭ বৃহস্পতিবার, ০৫:০০  এএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


সংসদে নিজের লেখা কবিতা শোনালেন এরশাদ

রাজনীতিতে আনপ্রেডিকটেবল ক্যারেক্টার হিসেবে সবাই তাকে চেনেন। কখন যে কোন ভূমিকায় তিনি অবতীর্ণ হন, তার হিসেব মেলানো কঠিন। সেনাপ্রধান থেকে স্বৈরশাসক। জেলও খেটেছেন। এখন তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত।

জাতীয় পার্টির চেয়ার‌ম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সেই বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কারাবাসকালীন তার ‘দুর্দশার’ কথা তুলে ধরেছেন জাতীয় সংসদে। জেলখানায় বসে ঋতুর আবর্তন নিয়ে লিখেছেন কবিতা।
নিজের লেখা সেই কবিতাও পাঠ করেছেন জাতীয় সংসদে।

বুধবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অংশ নিয়ে কারাবাসকালীন দিনগুলোর কথা তুলে ধরার পাশাপাশি জেলখানায় বসে লেখা কবিতা পড়ে শোনান তিনি।

সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদ বলেন, ‘জাস্টিস সাত্তার বললেন তার মন্ত্রিসভার সবাই দুর্নীতিপরায়ন। আমি দেশ পরিচালনায় অপারগ। সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাই। আমরা (সেনাবাহিনী) প্রস্তুত ছিলাম না। দেশ পরিচালনা করা সহজ ব্যাপার নয়। আমরা এ দায়িত্ব নিতে চাইনি। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত এ দায়িত্ব নিতে পরিস্থিতি বাধ্য করেছিল। আমি সেদিন বলেছিলাম, শৃঙ্খলা ফিরে আসার পর নির্বাচন দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যেতে চাই। আমি কথা রেখেছিলাম। ১৯৮৪ সালে নির্বাচন দিয়েছিলাম। সে নির্বাচনে যদি সকলে (সবদল) অংশগ্রহণ করতেন, তাহলে ব্যারাকে ফিরে যেতে পারতাম। দুঃখের বিষয় সবাই সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। বিএনপি-জামায়াত, এখানে মেনন সাহেব আছেন, উনারা অংশগ্রহণ করেন নাই। যার ফলে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি গঠন করতে হয়েছিল। আমি আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলাম। আমার কোনো দোষ নাই। আমাকে মাঝে মাঝে বলা হয় স্বৈরাচার। কোনো উপায় ছিল না, আমাকে ক্ষমতা নিতে হয়েছিল। জাতির স্বার্থে শৃ্খলা ফিরিয়ে এনে নির্বাচন দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা অংশগ্রহণ করেন নাই। তারপরে আমার দুর্বিসহ জীবন।’
 
জেল জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এরশাদ বলেন, ‘৬টি বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছিল। কথা বলার লোক নেই, আমি একলা। নির্জন কারাগার। দুর্বিষহ যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে ৬টি বছর। আমার স্ত্রী আড়াই বছর জেলে ছিল। আমার শিশু সন্তানকে জেলে নিয়েছিল। তার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছিল। আমি স্নান করতে পারি নাই ৬ বছর। চাঁদ দেখতে পারি নাই। ১২টা ঈদে অংশ (বাইরে) নিতে পারি নাই। ইফতারের সময় যে ইফতার দিত, বলেছিলাম আমাকে একটা বিস্কুট দিতে পারবেন? ডিআইজি বলেছিলেন বরাদ্দের বাইরে কিছু দেওয়া যাবে না। সব কথা মনে আছে। সেদিনের কথা স্মরণ করে একটা কবিতা লিখেছিলাম। তা পড়ে শুনাতে চাই।

“ওরা আমার সকল অনুভব ও চিন্তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। সে কথা লিখতে চেয়েছি, কিন্তু লিখতে পারি না। শুধু জানি বাইরের পৃথিবীতে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত আর বসন্ত আসে। শরৎ চলে যায়, হেমন্তরা মিশে থাকে সকল স্বপ্নের সঙ্গে। আমি লিখতে পারি না ছোট্ট ঝরা পাতার কথা। লিখতে পারি না আমি, একখানা সাদা কাগজ, একটি কলম। সারাদিন ভাবি সাদা কাগজ ও কলমের কথা। কতদিন নক্ষত্র দেখিনি, আমার আত্মার ....।”

‘সেই কান্নার সেতু বয়ে আজ আমি আপনাদের মাঝে সংসদে এসেছি। অনেক দুঃখ বেদনা অতিক্রম করে এখানে এসেছি। স্বপ্ন দেখাতাম, এখনো স্বপ্ন দেখি,’ যোগ করেন এরশাদ।

এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পাস হবে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: