facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

শেয়ারবাজারে রোজার প্রভাব


২৩ মে ২০১৭ মঙ্গলবার, ০৬:০৯  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


শেয়ারবাজারে রোজার প্রভাব

দেশের উভয় শেয়ারবাজারে দরপতন চলছেই। সর্বশেষ ১১ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ দিনই দরপতন হয়েছে। গত মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ৭ পয়েন্ট বৃদ্ধির পর গত তিন কার্যদিবসে কমেছে প্রায় ৭২ পয়েন্ট। এর মধ্যে রোববারই কমেছে প্রায় ৩৬ পয়েন্ট। লেনদেন হওয়া সাড়ে ৬২ শতাংশ শেয়ারের দাম কমার কারণেই সূচকের এ পতন। শেয়ারদর ও সূচকের এমন পতনে শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণও ব্যাপক হারে কমেছে। ডিএসইতে গতকাল কেনাবেচা হয়েছে ৪৫৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার, যা গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় ১৭৭ কোটি টাকা বা প্রায় ২৮ শতাংশ কম।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বরাবরের মতো এ দরপতনের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি। তবে অনেকেই মনে করছেন, আসন্ন রমজানের প্রভাব বাজারে থাকতে পারে। প্রতিবছর রমজানে বিনিয়োগ কার্যক্রম কিছুটা কমে যাওয়ায় বাজারদরে যে নেতিবাচক প্রবণতা থাকে, এখনকার দরপতন সে ধারারই শুরু বলে মনে করেন তারা। আবার কেউ কেউ বলছেন, আসন্ন জাতীয় বাজেট ঘোষণার প্রেক্ষাপটে অনেকেই বিনিয়োগে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। বিশেষত বাজেট ঘোষণা শেয়ারবাজার ইস্যুতে কেমন প্রভাব রাখতে পারে, তা নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী। এ কারণে বাজারে গতি নেই।
 
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় অনুষদ বিভাগের ডিন ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক মোহাম্মদ মূসাও মনে করেন এ বাজারের দরপতনের সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করা মুশকিল। তিনি বলেন, `আমার মনে হয় এ দরপতনে মনস্তাত্তি্বক প্রভাবটাই বেশি। গত কিছুদিন দরপতন হওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় থাকা এবং পতন ঠেকাতে দৃশ্যমান প্রচেষ্টা না থাকায় ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। তাতে আরও দরপতনের ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে লোকসান ঠেকাতে চাইছে।` তিনি বলেন, কিছু আশাবাদী বিনিয়োগকারী বাজারে আছেন বটে, তবে হতাশাবাদীদের সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। ব্যক্তি বিনিয়োগকারী নির্ভরতার কারণে বাজারের এ চরিত্র প্রায় স্থায়ী রূপ নিয়েছে।

সাম্প্রতিক লেনদেন বিশ্লেষণে ড. মূসা আরও বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারদর কমছে, যা সূচকে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অন্যদিকে উৎপাদন ও সেবামুখী কোম্পানির তুলনামূলক দর কমছে কম। আবার এসব খাতে বিনিয়োগও বাড়ছে। অর্থাৎ বিনিয়োগ এক খাত থেকে অন্য খাতে স্থানান্তর হচ্ছে। এটাও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

রোববার দিনের লেনদেন শেষে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২২ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২০১টির দর কমেছে, বেড়েছে ৮২টি এবং অপরিবর্তিত থেকেছে ৩৯টির দর। এতে ডিএসইএক্স সূচক প্রায় ৩৬ পয়েন্ট কমে ৫৩৬৩ পয়েন্টে নেমেছে। সূচকের এ অবস্থান গত ৫ ফেব্রুয়ারির পর সর্বনিম্ন।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৩০ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৪৭টিরই দর কমেছে। বেড়েছে ৫৮টির এবং অপরিবর্তিত থেকেছে ২৫টির দর। এতে এ বাজারের প্রধান সূচক সিএসসিএক্স প্রায় ৫০ পয়েন্ট কমে ১০০৭৪ পয়েন্টে নেমেছে। লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার।

সার্বিক লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রোববার ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক এবং পাট খাত ছাড়া অন্য প্রায় সব খাতের অধিকাংশ শেয়ারের দর কমেছে। ক্লোজিং প্রাইসের হিসাবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতের ২৩ কোম্পানির মধ্যে ১৮টির দর বেড়েছে ও কমেছে ৩টির। অধিকাংশ শেয়ারের দর বাড়লেও খাতটির সার্বিক শেয়ারদর শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। আর পাট খাতের ৩ কোম্পানির মধ্যে ২টির দর বেড়েছে। এতে খাতটির সার্বিক দর বেড়েছে পৌনে ৬ শতাংশ।

বিপরীতে ব্যাংক খাতের ৩০ কোম্পানির মধ্যে ১৬টির দর কমেছে, বেড়েছে মাত্র ৫টির। এতে খাতটির সার্বিক দর ১ শতাংশের ওপরে কমেছে। বীমা খাতের ৪৭ কোম্পানির মধ্যে ৩১টির দর কমেছে। এতে খাতটির সার্বিক শেয়ারদর ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ কমেছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ১৮ কোম্পানির মধ্যে ১৪টির দর কমেছে। একইভাবে প্রকৌশল খাতের ৩৩টির মধ্যে ২৫টির, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ২৮টির মধ্যে ২০টির, বস্ত্র খাতের ৪৭ কোম্পানির মধ্যে ৩৭টির, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ১৮টির মধ্যে ১৩টির, সিমেন্ট খাতের ৭ কোম্পানির মধ্যে ৬টিরই দর কমেছে। একই অবস্থান ছিল অন্য সব ছোট খাতে।

একক কোম্পানি হিসেবে সর্বাধিক সোয়া ১১ শতাংশ দর হারিয়েছে ব্যাংক এশিয়া। ব্যাংকিং কোম্পানিটির সর্বশেষ লেনদেন মূল্য ছিল ১৪ টাকা ৮০ পয়সা। দরপতনের এর পরের অবস্থানে থাকা নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, জুট স্পিনার্স, বিজিআইসি, ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের বাজারদর ৭ থেকে সাড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এমন দরপতনের মধ্যেও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং কোম্পানির শেয়ারদর সর্বাধিক সাড়ে ৯ শতাংশ দর বেড়ে ১৩ টাকা ৯০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে। দরবৃদ্ধিতে এর পরের অবস্থানে থাকা নর্দার্ন জুটের দর সোয়া ৭ শতাংশ বেড়েছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: